ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জগতে এখন সবথেকে কার্যকর কৌশল হলো ইউটিউব মার্কেটিং। ইউটিউবের বিশাল কমিউনিটিকে টার্গেট করে ইউটিউব ভিত্তিক মার্কেটিংই হলো ইউটিউব মার্কেটিং। একে আপনি ভিডিও মার্কেটিং নামেও বলতে পারেন।
এখনকার যুগে সবচেয়ে আলোচিত ও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভিডিও শেয়ারিং সাইট হলো ইউটিউব। একটু কি এটা আপনাকে নতুন করে পরিচয় করে দেওয়ার প্রয়োজন হবে না বলে আমি মনে করি।
কারণ আপনি ইউটিউব সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞান রাখেন বলেই আজকের আর্টিকেল ইউটিউব মার্কেটিং কি এবং ইউটিউব মার্কেটিং কেন করবেন পড়তে এখানে চলে এসেছেন।
আপনি এ বিষয়টা জানেন কিনা আমার জানা নেই সেটা হল ইউটিউব গুগল একই কোম্পানি। অনেকদিন পূর্বে গুগল ইউটিউব কে কিনে নিয়েছিল যেটা বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট এ পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এমন কোন স্মার্টফোন ইউজ আর পাওয়া যাবে না যে ইউটিউব ব্যবহার করে নাই অথবা ইউটিউব এর নাম কখনো শুনে নাই।
আজকে আমরা মূলত আলোচনা করব ইউটিউব মার্কেটিং কি এবং একজন মানুষকে কেন ইউটিউব মার্কেটিং করা উচিত। ইউটিউব মার্কেটিং 2024 সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার পরআপনি ইউটিউব মার্কেটিং সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পাবেন।
আরো দেখুন: ডিজিটাল মার্কেটিং কেনো করবেন?
ইউটিউব মার্কেটিং কী?
সহজ কথায় বলতে গেলে ইউটিউব মার্কেটিং হলো ইউটিউব কে ব্যবহার করে কোন প্রডাক্ট বা ব্র্যান্ডের বিক্রয় অথবা পরিচিত বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা করাকে বুঝায়। অনলাইন ভিত্তিক সব ধরনের মার্কেটিং আসলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটা অংশ। সেই কারণে ইউটিউব মার্কেটিংও ডিজিটাল মার্কেটিং একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আরও সহজ কথায় বলতে গেলে ইউটিউব মার্কেটিং হচ্ছে এক ধরনের ভিডিও মার্কেটিং।
ইউটিউব মার্কেটিং এর আসলে মূল কনটেন্ট হল ভিডিও। ইউটিউব মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বলতো কোন পণ্য বা সেবা অথবা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত ভিডিও তৈরি করে জনগণের উদ্দেশ্যে পাবলিশ করা হয়। সেই ভিডিও দেখার ফলে ওই পণ্য বা সেবার প্রতি জনগণের আগ্রহ তৈরি হয় এবং সেই পণ্য কিনতে সাবস্ক্রাইবারগণ প্রস্তুত হয়। পাশাপাশি কোন ব্র্যান্ড সম্পর্কে মানুষ অবগত হতে পারে।
ইউটিউব মূলত ভিডিও কেন্দ্রিক ওয়েবসাইট। তাই ইউটিউব মার্কেটিং এর যাবতীয় কাজকর্ম ভিডিওকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। ভিডিওর মাধ্যমে কোন পণ্য বা সেবার নৈর্ব্যক্তিক উপস্থাপনায় হলো ইউটিউব মার্কেটিং। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন অংশের মধ্যে ইউটিউব মার্কেটিং খুব বেশি জনপ্রিয়।
আপনি ইউটিউবে প্রবেশ করলে দেখতে পারবেন কোন পণ্য অথবা গ্যাজেট সম্পর্কে প্রতিনিয়ত রিভিউ নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করছে ইউটিউবাররা। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ইউটিউব মার্কেটিং জিনিসটা কি!
আরও দেখুন: কনটেন্ট মার্কেটিং কি? কনটেন্ট মার্কেটিং কিভাবে করতে হয়?
ইউটিউব মার্কেটিং কেন করবেন?
বর্তমানে সবাই যারা বিশেষ করে স্মার্টফোন ব্যবহার করে তারা ইউটিউব ব্যবহার করে থাকে। এখন ওয়েবসাইটের চেয়ে ইউটিউবে ট্রাফিক পাওয়া অত্যন্ত সহজ। অল্প সময়ের মধ্যেই ইউটিউব থেকে প্রচুর পরিমাণে ট্রাফিক জেনারেট করা যায়।
এছাড়া ইউটিউব মার্কেটিং বর্তমানে জনপ্রিয় হয় এটা অনেকটা কার্যকরী একটা অনলাইন মার্কেটিং। খুব সহজে বিনা খরচে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে ইউটিউব মার্কেটিং করা যায় যার ফলে আপনার কোন ডোমেইন ও হোস্টিং খরচ বহন করতে হয়। এছাড়া নিম্নোক্ত সুবিধাগুলোর কারণে একজনের ইউটিউব মার্কেটিং করা উচিত।
ইউটিউব মার্কেটিং এর সুবিধাসমূহ
১. বর্তমানে ওয়েবসাইটে আর্টিকেল পড়ার চেয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখতে মানুষ বেশি পছন্দ করে থাকে। ওয়েবসাইটে আর্টিকেল পড়া মানুষ এখন খুব কমে গেছে। এছাড়া ভিডিও দেখে যেকোনো বিষয় সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এ কারণে ইউটিউব মার্কেটিং করে খুব সহজে ট্রাফিক এর মধ্যে আগ্রহ তৈরি করা যায়।
২. ভিডিও তৈরি করে যেকোনো পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সরাসরি দর্শকদের বৈশিষ্ট্য বা ফিচার তুলে ধরার মাধ্যমে ওই পণ্যের প্রতি তাদের খুব সহজেই আকৃষ্ট করা যায়।
৩. ইউটিউব মার্কেটিং করতে তেমন কোনো অতিরিক্ত সহায়ক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বা গ্যাজেট প্রয়োজন হয় না। আপনার যদি কোন ক্যামেরা না থাকে তবে মোবাইল দিয়ে খুব সহজে ভিডিও তৈরি করে কাজ করতে পারবেন। এতে করে নতুনরা ইউটিউব করার আগ্রহ খুঁজে পায়।
৪. একজন যদি কোয়ালিটি সম্পন্ন ভিডিও তৈরি করতে পারে তাহলে ইউটিউব সহ যেকোন মার্কেটপ্লেসে খুব সহজে কাজ খুঁজে পেতে পারে। তখন তার চাহিদা সব জায়গায় তৈরি হয়ে যায়।
আরও দেখুন – ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কতদিন লাগে?
কিভাবে ইউটিউব মার্কেটিং করবেন?
ইউটিউব এ তিন ধরনের ভিউয়ার্স খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথমজন হলো ভিডিও তৈরিকারী বা কনটেন্ট নির্মাতা, দ্বিতীয়জন হলো দর্শক বা সাবস্ক্রাইবার এবং তৃতীয় ভালো কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যে তার পণ্য সম্পর্কে বিজ্ঞাপন দিতে আগ্রহী।
ইউটিউব মার্কেটিং শুরু করতে হলে আপনাকে ধাপে ধাপে কয়েকটা কাজ করতে হবে যেগুলো আমি নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরছি। এ বিষয়গুলো জেনে আপনি ইউটিউব থেকে সার্চ করে বিস্তারিত ভালোভাবে হাতে-কলমে দেখে নিতে পারেন।
প্রথম ধাপ
আপনি যদি বর্তমানে ইউটিউব মার্কেটিং করতে চান এজন্য প্রথমে আপনাকে একটা সুন্দর করে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে নিতে হবে। এরপর আপনাকে ভিডিও তৈরীর কাজ করতে হবে। এজন্য একটা ক্যামেরার প্রয়োজন হবে যদি আপনার কোন ক্যামেরা না থাকে তবে মোবাইলের ক্যামেরা কাজে লাগিয়ে এই সমস্যার সমাধান করে নিতে পারবেন।
এরপর আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো আপনার তৈরি ভিডিওটা এডিটিং করা। ল্যাপটপ এর প্রয়োজন হয় এ কাজটি করতে তবে আপনার যদি ল্যাপটপ বা পিসি কোনটাই না থাকলে কোন সমস্যা নেই আপনি মোবাইল দিয়ে কাজটি করতে পারবেন।
দ্বিতীয় ধাপ
আপনার চ্যানেল তৈরি করার কাজটি সম্পূর্ণ করার পর আপনার চ্যানেল টি সুন্দর করে প্রফেশনাল ভাবে সাজিয়ে নিতে হবে। যাতে আপনাকে দেখতে একজন প্রফেশনাল ইউটিউবার মনে হয়। এরপর আপনি যে পণ্য বা সেবা তিনি এ মার্কেটিং করতে চান সেই পণ্য বা সেবার উপর তৈরি করা ভিডিও গুলো নিয়মিত আপলোড করতে আরম্ভ করুন।
ধাপ তৃতীয়
আপনার ভিডিও সবার সামনে তুলে ধরতে হলে আপনার চ্যানেলটি ভালোভাবে এসইও করে নিতে হবে। এসইও করার মাধ্যমে আপনার চ্যানেল টি রেংক করাতে পারবেন। আপনার চ্যানেল টি রেংক হলে যে কেউ ভিডিও সার্চ করলে আপনার চ্যানেল সম্পর্কিত ভিডিও সবার আগে চলে আসবে। প্রথম অবস্থায় আপনি ইউটিউব চ্যানেল করে তেমন কোন ভিউ পাবেন না। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সব নতুন ইউটিউবাররা প্রথম অবস্থায় ভিউ পায় না।
ধাপ চতুর্থ
ইউটিউব মার্কেটিং করে অল্প সময়ের মধ্যে সফলতা পেতে হলে আপনাকে অনেক বেশি ভিউ পেতে হবে। এর জন্য প্রথম অবস্থায় আপনি চাইলে টাকা দিয়ে আপনার ভিডিওগুলো ইউটিউবে বুষ্ট করাতে পারবেন। তাহলে ভিডিও গুলো আপনার কাঙ্খিত মানুষদের কাছে অটোমেটিক পৌঁছে যাবে।
ইউটিউবে ভিডিও বুস্ট করার জন্য আপনার একটা মাস্টার কার্ড অথবা ভিসা কার্ড এর প্রয়োজন হবে। এই কার্ডগুলোর মাধ্যমে ইউটিউবকে আপনি প্রেমেন্ট করতে পারেন। তবে আপনি যদি একদম বিনামূল্যে প্রচুর পরিমাণে আপনার ইউটিউব এর ভিডিও গুলোতে ভিউ পেতে চান তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি বেশি শেয়ার করতে পারবেন । এতে করে অল্প করে হলেও কিছুটা ভিউ পাওয়া যায়।
শেষ ধাপ
আপনি যদি ইউটিউব এর রুলস অনুসারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিভো ওয়াচ টাইম পূরণ করতে পারেন তাহলে এবার আপনি আপনার চ্যানেলটি মনিটাইজ এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনার চ্যানেলটি ইউটিউব এর সব শর্ত পূরণ করতে পারলে তবে আপনি গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট তৈরি করে আপনার চ্যানেলটি রিভিউ আবেদন করাতে পারেন।
আপনার ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজ পেলে আপনি ইউটিউব মার্কেটিং এর পাশাপাশি গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারবেন। ইউটিউব মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনি এখান থেকে একসাথে ইউটিউব মার্কেটিং করে আয় করতে পারবেন অন্যদিকে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে সেই ভিডিওর মাধ্যমে আয় করতে পারবে। এভাবে আপনার চ্যানেল টি যদি জনপ্রিয় হয় তবে ইউটিউব এর পাশাপাশি ইউটিউব মার্কেটিং করে প্রচুর পরিমাণে টাকা অনলাইন থেকে আয় করতে পারবেন।
আরোও দেখুন: ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখবো
সারকথা
তো এই ছিল বন্ধুরা ইউটিউব মার্কেটিং কি এবং ইউটিউব মার্কেটিং কেন করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত একটা ধারণা। এই আর্টিকেল তা মনোযোগ দিয়ে পড়লে আপনি ইউটিউব মার্কেটিং সম্পর্কে প্রায় সব তথ্য জানতে পারবেন সে সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ একটা ধারণা পাবেন ইউটিউব মার্কেটিং সম্পর্কে।
ইউটিউব মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে বা নতুন কিছু জানতে কমেন্ট করতে পারেন, পাশাপাশি এই আর্টিকেলটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারেন।