AI- Powered Digital Media & Learning Platform
AI- Powered Digital Media & Learning Platform

যে কাজগুলো করলে ফেসবুক আইডি কখনোই হ্যাক হবে না

ফেসবুক নিরাপত্তা

ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার অনেক খবর আমাদের কানে আসে। অনেক সময় দেখা যায় ফেসবুক আইডি হ্যাক করার পর হ্যাকাররা ইউজারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে অথবা ব্ল্যাকমেইল করে। মূলত ফেসবুক হ্যাক করা অত সহজ কাজ না, তাহলে কেন ফেসবুক আইডি হ্যাক হচ্ছে?

বিশ্বে এখন সবথেকে বেশি ব্যবহৃত সোশ্যাল সাইট হলো ফেসবুক। এমনকি আমাদের বাংলাদেশেই ৩ কোটির বেশি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাই এই বিশাল কমিউনিটির প্রতি হ্যাকারদের সবসময় চোখ থাকে।

কেন এত বেশি পরিমাণে ফেসবুক আইডি হ্যাক হচ্ছে? উত্তরটা সহজ, মূলত আপনার নিজের কিছু বোকামি ও অসতর্কতার কারণেই আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হতে পারে। আজকের আর্টিকেলে আমরা এমন কিছু কাজ ও কৌশলসম্পর্কে জানবো সেই কাজগুলো করলে আর পাশাপাশি সতর্ক থাকলে কখনোই আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হবে না।

আরোও দেখুন: ফেসবুক আইডি ডিলিট করার নিয়ম

ফেসবুকের নিরাপত্তা বাড়ানোর উপায়

ফেসবুকের নিরাপত্তা মূলত আমাদের নিজেদের হাতে। আমরা যদি সঠিকভাবে কয়েকটি নিয়ম ফলো করি তাহলে আমাদের ফেসবুক প্রোফাইলটির নিরাপত্তা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তো নিচে আমরা কয়েকটি নিয়ম তুলে ধরছি যেগুলো ফলো করলে আপনার আইডি সহজে হ্যাক হবে না।

১. কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন

অনেকেই সহজে লগইন করার জন্য একদম সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে যেমন: 123456,456789,135780 । এধরনের পাসওয়ার্ড কোন ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। কোন হ্যাকার যদি ম্যানুয়ালি ট্রাই করে তাহলেই এই পাসওয়ার্ডগুলো সহজেই জানতে পারে। তাই শুধু নাম্বার ব্যবহার করে কখনোই পাসওয়ার্ড দিবেন না।

পাসওয়ার্ড দিবেন নাম্বার, ছোট হাতের অক্ষর, বড় হাতের অক্ষর ও বিভিন্ন চিহ্নের সমন্বয় করে। যেমন একটি কঠিন পাসওয়ার্ড হতে পারে AmAπsonaRBAngL@42 এধরনের পাসওয়ার্ড হ্যাকাররা কোনো পাসওয়ার্ড জেনারেটর টুলস দিয়েও সহজে ক্যাচ করতে পারবে না।

আর কখনোই কিবোর্ড বিন্যাস অনুযায়ী পাসওয়ার্ড দিবেন না। বিভিন্ন পাসওয়ার্ড জেনারেটর টুল সবার প্রথম কিবোর্ড বিন্যাস অনুযায়ী পাসওয়ার্ডগুলো ট্রাই করে। এক্ষেত্রে আপনার গুগল ক্রোম এর সাজেস্ট করা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এ পাসওয়ার্ডগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে থাকে।

২. ফেসবুক আইডিতে অবশ্যই মেইল যোগ করবেন

ফেসবুক আইডি নিরাপত্তার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ফেসবুক আইডিতে ইমেইল যুক্ত করা। কারণ ফেসবুকের সকল ধরনের অফিসিয়াল যোগাযোগ তারা ইমেইলের মাধ্যমে করে থাকে। বিশেষ করে দেখা যায় আমাদের অনেকের ফেসবুক আইডিতে ইমেইল অ্যাকাউন্ট যোগ করা থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুধু ফোন নাম্বার দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করা থাকে।

কিন্তু একটা জিনিস আমাদের মাথায় রাখতে হবে আপনার যখন কোনো অযাচিত লোকেশন থেকে অ্যাকাউন্টে অ্যাক্সিস নেওয়ার চেষ্টা করা হবে তখন ইমেইলে নোটিফিকেশন মেইল আসে। কেউ আইডি হ্যাক করে ঢুকার চেষ্টা করলেও সেটার নোটিফিকেশন প্রথম ই-মেইলে আসে।

কিন্তু আপনার আইডিতে যদি শুধু ফোন নাম্বার থাকে তাহলে কখনোই অযাচিত লোকেশন থেকে অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস নেওয়ার চেষ্টা করলে আপনি জানতে পারবেন না। কাজেই আপনার ফেসবুক আইডিতে একটি ইমেইল দিয়ে ভেরিফাই করে নিন।

আরো দেখুন: ফেসবুক থেকে আয় – ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করুন

৩. টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করে নিন

আমরা অনেকেই গুগল একাউন্টের টু স্টেপ ভেরিফিকেশন সম্পর্কে জানি। টু স্টেপ ভেরিফিকেশন নিরাপত্তার স্বার্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি টুলস। ফেসবুকেও রয়েছে টু ওয়েস্ট ভেরিফিকেশন করার সুবিধা।

টু স্টেপ ভেরিফিকেশন হলো দুই ধাপের নিরাপত্তা। এতে করে কেউ আপনার পাসওয়ার্ড জানলেও আপনার আইডিতে লগইন করতে পারবে না। আইডিতে লগইন করতে হলে আপনার ফোন নাম্বারে আসা এসএমএস কোডটি দিতে হবে। যেকোনো অ্যাকাউন্টকে হ্যাকার থেকে রক্ষা করতে সবথেকে কার্যকরী কাজ হল এই টু স্টেপ ভেরিফিকেশন।

শুধুমাত্র ফোনে আসা এসএমএস এর মাধ্যমেও না, ইমেইলে আসা কোড এমনকি আগে লগইন করা হয়েছে এমন ডিভাইস থেকেও টু স্টেপ ভেরিফিকেশন এপ্রুভ করার সুবিধা রয়েছে। তাই কোন কারনে আপনার মোবাইল ফোনের সিম আপনার সাথে না থাকলেও আইডিতে লগইন করতে পারবেন।

এই লিংকে ক্লিক করে আপনার ফেসবুক আইডিতে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করে নিন।

৪. আইডিতে ট্রাস্টেড কন্টাক্ট যোগ করুন

ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ট্রাস্টেড কন্ট্যাক্টস যোগ করা। ট্রাস্টেড কন্ট্যাক্টস হলো এমন একটি বিষয় যেখানে আপনার বিশ্বাসযোগ্য বা কাছের মানুষদের আইডি যোগ করতে পারেন। এতে করে আপনার আইডিতে কোন অযাচিত কার্যকলাপ হলে ট্রাস্টেড কন্টাক্ট থেকে আপনার আইডিতে এক্সেস নেওয়া যাবে।

এই লিংকে ক্লিক করে আপনার আইডিতে তিনজন ট্রাস্টেড কন্টাক্ট যোগ করে নিন।

৫. ফিশিং লিংক থেকে সতর্ক থাকুন

ফেসবুক হ্যাকিং এর সবথেকে বড় পাওয়া হচ্ছে ফিশিং। বেশিরভাগ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয় এই ফিশিং করার মাধ্যমেই। ফিশিং হলো কোনো একটা লিংক যেটাতে আপনি ক্লিক করলে তাদের কাছে আপনার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড চলে যায়!

তাই ফেসবুক থেকে সবসময় কোনো লিংকে ঢুকার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন। ফিশিং লিংক মূলত লোভনীয় টাইটেলের হয়ে থাকে। আপনারা হয়তো ইদানিং কমেন্ট সেকশনে বিকাশে টাকা ইনকামের বিভিন্ন লিংক দেখতে পারেন। এগুলোই কিন্তু ফিশিং!

ফেসবুক ফিশিং

তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায় কিছু অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে ফেসবুকের মাধ্যমে লগইন (Log In With Facebook) অপশন থাকে। এসব জায়গায় লগইন করার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় কিছু অসাধুচক্র মানুষের ফেসবুক পাসওয়ার্ড দখলে নেওয়ার জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে।

এছাড়া ফেসবুকের বিভিন্ন গেইম, টুলস, প্রশ্ন উত্তর, সিক্রেট ম্যাসেজে লগইন করলেও আপনার পাসওয়ার্ড চলে যেতে পারে তাদের কাছে। এ সকল জায়গায় লগইন করার আগে দেখে নিবেন এগুলো অথেনটিক কিনা

৬. গুরুত্বপূর্ন তথ্য হাইড করে রাখুন

অবশ্যই আপনার ইমেইল, ফোন নাম্বার ও জন্ম তারিখ হাইড (only me) করে রাখবেন। এতে করে হ্যাকাররা আপনার অ্যাকাউন্টের ক্লোন অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবে না। এখন আপনার মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে একাউন্ট ক্লোন কি?

ফেসবুক একাউন্টের ক্লোন বলতে বুঝায় আপনার একাউন্টের মতই প্রোফাইল পিকচার, কভার ফটো, অন্যান্য তথ্য দিয়ে একই রকম একাউন্ট খোলা। একাউন্ট ক্লোনের মাধ্যমে মূলত হ্যাকাররা টার্গেট প্রোফাইল কে রিপোর্ট দিয়ে ডিজেবল করে দেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এটা খুবই কমন একটা ঘটনা। অনেকে শত্রুতার বসেও প্রোফাইল ক্লোন করে আইডি নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করে।

ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার অবশ্যই লক করে রাখবেন, সম্ভব হলে অনলি মি করে রাখবেন। তার থেকেও বেশি নিরাপত্তা হয় যদি আপনি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি লক করে রাখেন।

৭. সঠিক তথ্য দিয়ে ফেসবুক আইডি খুলুন

অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় আমরা আমাদের বাস্তব নাম, জন্ম তারিখ বা অন্যান্য তথ্য ঠিক না রেখে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরি করি। এক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কারনে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হলে বা ডিজেবল হলে সেটি ফিরিয়ে আনতে পারবেন না।

কারণ আপনার ডকুমেন্টের সাথে আপনার ফেসবুকে দেওয়া তথ্যের কোন মিল নেই। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় অবশ্যই সঠিক তথ্য দিবেন, বিশেষ করে আপনার জন্ম সনদ, পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয় পত্রের সাথে মিল রেখে আইডির নাম এবং জন্মতারিখ দিবেন।

এই কয়েকটি কাজের মাধ্যমে আপনি আপনার একাউন্টের নিরাপত্তা বাড়িয়ে নিতে পারেন। কিছুদিন পর পর ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা বুদ্ধিমানের কাজ। ফেসবুকে অত্যন্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করাই উত্তম, কারণ ফেসবুক একটি থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট, কেন আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য গুলো তৃতীয় ব্যক্তির কাছে রাখবো!

ফেসবুক হ্যাক হলে করণীয় কি?

এতকিছুর পরেও যদি আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয় তাহলে শুরুতেই বিচলিত হওয়া যাবে না। প্রথমে আপনার আইডিতে যুক্ত থাকা ইমেইলের ইনবক্স চেক করুন যে, কোনো ধরনের নোটিফিকেশন ফেসবুক থেকে এসেছে কিনা। যদি ইমেইলে কোন নোটিফিকেশন এসে থাকে তাহলে ইমেইল থেকে সহজেই আইডি রিকভার করতে পারবেন। এছাড়া আপনার আইডিতে যুক্ত করা ট্রাস্টেড একাউন্ট থেকে আপনি আইডি রিকভার এর চেষ্টা করতে পারেন। এক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ কারোর সহযোগিতার নেওয়া ভালো হবে।

আর নিরাপত্তার স্বার্থে আপনার বন্ধুদের আইডি থেকে ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দিতে পারেন আপনার আইডিটি হ্যাক হয়েছে। অন্যথায় হ্যাক করা আইডি থেকে কোন কিছু দাবি করা হলে সেটার তাই আপনার উপর পড়তে পারে। আর সাইবার সিকিউরিটি আইন অনুসারে আপনার আইডিটি হ্যাক হলে আপনি স্ক্রিনশট সহ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে পারেন। আপনাকে পুলিশের সাইবার ইউনিট আপনাকে সহযোগিতা করবে।

আসুন জানি – ফেসবুক ভিডিও ডাউনলোড করার সহজ উপায়

শেষ কথা

আমরা ডিজিটাল হওয়ার সাথে সাথে সব থেকে যে এলার্মিং বিষয়টি সামনে আসছে সেটি হচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি। সুতরাং অনলাইনে নিরাপদ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এখানে আমরা কয়েকটি স্টেপ শেয়ার করেছি যেগুলোর মাধ্যমে আপনি ফেসবুক নিরাপদে ব্যবহার করতে পারবেন।

উপরের কাজগুলো করলে আশা করা যায় কখনোই আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হবে না। কখনোই আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হবে না। ফেসবুক হ্যাকিং সংক্রান্ত এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। হ্যাপি ফেসবুকিং

Share this article
Shareable URL
Prev Post

ছবি ক্লিয়ার করার সফটওয়্যার – ঝাপসা ছবি ক্লিয়ার

Next Post

পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে ৫টি করণীয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *