ডিজিটাল মার্কেটিং – একটা কথা আছে “প্রচারেই প্রসার” প্রচার বা মার্কেটিং বিষয়টা সবক্ষেত্রেই জরুরী সেটা হোক কোনো ব্যবসা, উদ্যোগ অথবা ব্যক্তি প্রচারণা।
তবে সময়ের সাথে পাল্টে গেছে মার্কেটিংয়ের কৌশল ও প্রস্তুতিতে এসেছে নতুনত্ব এবং আধুনিকায়ন। যেটারই ফল হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং।
এক কথায় বলতে গেলে ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে কোন কিছুর মার্কেটিং বা প্রচার করা। ডিজিটাল মার্কেটিং শব্দটার সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং কেনো করবো? বা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব কি? এসব বিষয় আমাদের কাছে একদম ক্লিয়ার না।
বঙ্গ উইকির আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং করার কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
আরো দেখুন – ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখবো – ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায়
ডিজিটাল মার্কেটিং কেনো করবেন?
- কাস্টমারেরা ডিজিটাল হচ্ছে
- অল্প খরচে ডিজিটাল মার্কেটিং করা যায়
- অল্প সময়ের মধ্যেই মার্কেটিং
- সহজেই মার্কেট ট্রাক করা যায়
- ট্রেন্ডিং ইস্যু নিয়ে কাজ করে সুবিধা পাওয়া যায়
- সহজে কাস্টমারের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা যায়
- প্রতিযোগীদের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ধরতে পারা যায়
কাস্টমারেরা ডিজিটাল হচ্ছে
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রধান কারণই হচ্ছে কাস্টমার বা ভোক্তারা ডিজিটাল হচ্ছে বেশি বেশি করে। ভোক্তারা এখন কোন পণ্য কেনার আগে দেখতে চায় সেই পন্যটি কেমন? কি কি গুনাবলী রয়েছে? ভোক্তা সেই পণ্য গ্রহন করলে কি কি সুবিধা পাবে? অন্য আর কে এমন ধরণের সেবা প্রদান করে? তাদের সাথে এই পণ্যের পার্থক্য কি? তার পরিচিত কেউ একই পণ্য ব্যবহার করছে কিনা। বা সাধারণ জনগন এই পণ্য ব্যবহার করে কি রিভিউ দিচ্ছে ইত্যাদি, এই বিষয়গুলো জানার জন্য ভোক্তা সহজেই ব্যবহার করে তার হাতের মোবাইলটি বা কম্পিউটারটি। গুগলে সার্চ করে পণ্যটি সম্পর্কে।
আপনার সেবা নেওয়ার আগে তারা অন্তত ইউটিউবে ভিডিও দেখে। তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনাকে ডিজিটাল বিভিন্ন মাধ্যমে কেনো মার্কেটিং করতে হবে । তাছাড়া একটা সময় ছিলো যখন আপনি যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে চাইতেন বা কোনো উদ্যোগ নিতেন তখন পোস্টারিং/মাইকিং ছিলো মার্কেটিংয়ের সেরা পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমানে পোস্টারিং বা মাইকিং করে আপনি আপনার উদ্যোগটি বা ব্যবসাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবেন না।
এখন ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি বেশি মানুষকে আপনার সেবা সম্পর্কে জানাতে পারবেন। এখন প্রায় বাংলাদেশে ২০ কোটি বা তারও বেশি একটিভ সিম কানেকশন রয়েছে, প্রায় ৩ কোটি ফেসবুক ইউজার রয়েছে। তাহলে একবার বুঝুন মানুষ দিন দিন কি পরিমাণ প্রযুক্তির দিকে আগাচ্ছে।
আরো দেখুন – ইউটিউব মার্কেটিং কি? ইউটিউব মার্কেটিং কেনো ও কিভাবে
এই ২০ কোটি সিমের নাম্বারে আপনি বাল্ক এসএমএস পাঠিয়ে প্রায় ১০-১২ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন আর ফেসবুকের এই বিশাল কমিউনিটিতে আপনি সহজেই পৌঁছাতে পারবেন। তাই বুঝাই যাচ্ছে মানুষ যদি ডিজিটাল না হতো তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং শব্দটাই হয়তো জন্ম নিত না।
অল্প খরচে ডিজিটাল মার্কেটিং করা যায়
আর্টিকেল এর শুরুতে যে কথাটা বলতেছিলাম “প্রচারেই প্রসার”। তবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে এটা হতে পারে “অল্প খরচে প্রচারেই বেশি প্রসার”। অল্প খরচে বিশাল কমিউনিটির কাছে পৌঁছানোর কারণেই ডিজিটাল মার্কেটিং দিন দিন এত জনপ্রিয় হচ্ছে।
ধরুন যমুনা ফিউচার পার্কে আপনার একটি শোরুম রয়েছে। একবার চিন্তা করুন কত পরিমান খরচ হতে পারে যদি সমগ্র ঢাকায় প্রচার করতে চান! কিন্তু এই কাজটি আপনি সহজেই করতে পারবেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে।
বিশেষ করে আপনি যদি একটি ফেসবুক পেইজ খুলে সেটি প্রমোট করেন। তাহলে খুব অল্প খরচেই ভালো মার্কেটিং করতে পারবেন। এখন সবথেকে বড় প্ল্যাটফর্ম হলো ইউটিউব। এক্ষেত্রে এটিকে বেছে নিয়ে সঠিকভাবে ব্যাবহার করতে পারলে নামমাত্র মূল্যে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারবেন।
অল্প সময়ের মধ্যেই মার্কেটিং
মার্কেটিং বিষয়টা সময়ের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মার্কেটিং এর টাইমিং বলে একটা বিষয় রয়েছে, ধরুন আপনি গরমকালে শীতকালীন পোশাকের মার্কেটিং করলে তো আর হবে না।
কিন্তু দেখুন আপনি যখন এনালগ পদ্ধতিতে মার্কেটিং করবেন তখন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাস্টমারের কাছে নাও পৌছাতে পারেন, তবে আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এর বাল্ক এসএমএস, ইমেইল, ফেসবুক এডসের মাধ্যমে মার্কেটিং করেন তাহলে ইনস্ট্যান্ট গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন।
সহজেই মার্কেট ট্র্যাক করা যায়
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খুব সহজেই আপনি মার্কেট ট্র্যাক এবং এনালাইসিস করতে পারবেন। অর্থাৎ ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন কাস্টমাররা আসলে কি চাচ্ছে। আপনি হয়তো এনালগ পদ্ধতিতে এতটা সহজে কাস্টমাররা কি চাচ্ছে সেটা সম্পর্কে জানতে পারতেন না।
ধরুন আপনার শার্ট বিক্রি করার একটা অনলাইন ফেসবুক ভিত্তিক শপ রয়েছে। সেখানে পোষ্টের কমেন্ট, ইনবক্স বা রিভিউতে কাস্টমার এরা আসলে কি চাচ্ছে সেটি জানতে পারবেন। এছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট জায়গা, পেশা, বয়স ট্র্যাক করে মার্কেটিং করতে পারবেন।
আরও দেখুন: কনটেন্ট মার্কেটিং কি? কনটেন্ট মার্কেটিং কিভাবে করতে হয়?
তাছাড়া খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার মার্কেটিং পলিসি ঠিকমত কাজ করছে কিনা বা আপনি কতটুকু সফল হতে পারছেন।
ট্রেন্ডিং ইস্যু নিয়ে কাজ করে সুবিধা পাওয়া যায়
আমাদের আশেপাশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে তার মধ্যে অনেকগুলো ঘটনা ট্রেন্ডিং হয়ে যায়। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বেশিরভাগ মানুষ সেই ট্রেন্ড ফলো করে। আর আপনি যদি সেই ট্রেন্ড অনুযায়ী কাজ করতে পারেন তাহলে আপনার সার্ভিস, উদ্যোগ বা ব্যবসার জন্য ভালো হবে।
কিছুদিন আগে যখন ‘বাবু খাইছো’ নামক গানটা ভাইরাল হয় তখন সবার মুখে একই বিষয়। আপনারা হয়তো একটা বিষয় খেয়াল করেছেন তখন অনেক কোম্পানি বিজ্ঞাপনের সময় বাবু খাইছো শব্দটি ইউজ করেছে। এটাই হলো মার্কেটিং স্ট্রাটেজি।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ট্রেন্ডিং চলে। আপনি যদি মার্কেটিং এ সফল হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে সেই ট্রেন্ডিং অনুসারেই কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যা আপনি সহজেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে করতে পারবেন। এক্ষেত্রে গুগল ট্রেন্ডস টুলটি খুবই কার্যকর।
সহজে কাস্টমারের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা যায়
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে সফল হওয়ার আরেকটি কাজ হল কাস্টমারের সাথে খুব সহজে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক তৈরি করা। এতে করে বিশ্বাসের জায়গায় পৌঁছানো যায়। আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যতীত এত সহজে কাস্টমারের সাথে এতটাও সুসম্পর্ক সহজেই তৈরি করতে পারবেন না।
ধরুন আপনি যখন ফেসবুকে কাস্টমারদের সাথে নিয়মিত কথা বলবেন, লাইভ করবেন, তাদের কমেন্ট পড়বেন। তখন তাদের বিশ্বাসের জায়গায় পৌঁছাবেন। এক্ষেত্রে ফেসবুক পেইজ, ইউটিউব চ্যানেল গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রতিযোগীদের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি সহজে ধরা যায়
ব্যবসায় লাভবান হতে চাইলে অবশ্যই আপনার প্রতিযোগীদের মার্কেটিং পলিসির দিকে নজর রাখতে হয়। এতে করে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কি করা দরকার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি সহজেই আপনার প্রতিযোগীদের মার্কেটিং পলিসি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন। এছাড়াও আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কি করা উচিত আপনার প্রতিযোগীর থেকে ভালো ফল পেতে।
ধরুন আপনি ফেসবুক পেইজে প্রমোট/বুষ্টিং করার মধ্যেই মার্কেটিং সীমাবদ্ধ রেখেছেন। কিন্তু আপনার প্রতিযোগী এসবের পাশাপাশি পেইজে নিয়মিত লাইভ করতেছে। তাই এখন আপনার উচিত হবে তার থেকেও আরো ইন্টারেকটিভ করে লাইভ হোস্ট করা।
অর্থাৎ ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিযোগীর মার্কেটিং পলিসি ও আপনার অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন। যার ফলে আপনি আপনার প্রতিযোগী থেকে পিছিয়ে পড়লে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে আপনার প্রতিযোগীকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন।
শেষ কথা
মূলত কেনো ডিজিটাল মার্কেটিং করা উচিৎ এটার কারন অনেক। তবে এই ছিলো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলোর কারণে ডিজিটাল মার্কেটিং করা দরকার। ডিজিটাল মার্কেটিং আমাদের মতো উন্নয়নশীল এবং দ্রুত ডিজিটালাইজেশন হওয়া দেশের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় ও ফলপ্রসূ খাত।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারেন। ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জানান।