আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ চালানোর সবচে আনন্দদায়ক দিকগুলোর একটি হলো, সেখান থেকে আয় করা। আর সেই আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হলো বিজ্ঞাপন। তবে, অনেকের ক্ষেত্রেই গুগল এডসেন্সের কঠোর নীতিমালা বা অনুমোদন না পাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। চিন্তা নেই, গুগল অ্যাডসেন্সের বাইরেও অনেক দারুণ বিকল্প রয়েছে, যেগুলো আপনাকে ভালো আয়ের সুযোগ করে দিতে পারে।
আজকে আমরা এমনই ১০টি বিকল্প নিয়ে আলোচনা করবো, যা আপনার ওয়েবসাইটের মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের সুবিধা-অসুবিধা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখবো, কোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযোগী হতে পারে।
আরও দেখুন – প্যাসিভ ইনকাম কি? সেরা ৫টি প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া
১. মিডিয়া ডট নেট – Media.net
ইয়াহু ও মাইক্রোসফটের যৌথ উদ্যোগ এই নেটওয়ার্কটি গুগল অ্যাডসেন্সের মতোই কন্টেক্সটুয়াল বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। এছাড়াও, এটি সরাসরি বিক্রয় এবং programmatic বিজ্ঞাপনের সুযোগ দেয়। প্রতিযোগিতামূলক সিপিএম (Cost Per Mille) অফার করে, তবে অনুমোদন প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল এবং কম ট্রাফিকের ওয়েবসাইটের জন্য কম লাভজনক হতে পারে।
সুবিধা:
- গুগল অ্যাডসেন্সের মতোই কন্টেক্সটুয়াল বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে।
- সরাসরি বিক্রয় এবং programmatic বিজ্ঞাপনের সুযোগ।
- প্রতিযোগিতামূলক সিপিএম (Cost Per Mille) অফার করে।
অসুবিধা:
- অনুমোদন প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হতে পারে।
- কম ট্রাফিকের ওয়েবসাইটের জন্য কম লাভজনক হতে পারে।
২. প্রোপেলার এডস – PropellerAds
এই প্ল্যাটফর্মটি বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ফরম্যাট (পপ-আপ, পপ-আন্ডার, ইন-ব্যানার, ন্যাটিভ) সরবরাহ করে এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকগোষ্ঠীকে টার্গেট করার সুবিধা দেয়। কম ট্রাফিকের ওয়েবসাইটের জন্যও উপযোগী। তবে, কিছু বিজ্ঞাপন ফরম্যাট ইউজার এক্সপেরিয়েন্স নষ্ট করতে পারে এবং লো কোয়ালিটি বিজ্ঞাপন দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুবিধা:
- বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ফরম্যাট (পপ-আপ, পপ-আন্ডার, ইন-ব্যানার, ন্যাটিভ) সরবরাহ করে।
- বিশ্বব্যাপী দর্শকগোষ্ঠীকে টার্গেট করার সুবিধা।
- কম ট্রাফিকের ওয়েবসাইটের জন্যও উপযোগী।
অসুবিধা:
- কিছু বিজ্ঞাপন ফরম্যাট ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা নষ্ট করতে পারে।
- লো কোয়ালিটি বিজ্ঞাপন দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩. এমাজন পাবলিশার – Amazon Publisher Services
এমাজন পণ্যের সাথে সম্পর্ক থাকা ওয়েবসাইটের জন্য দুর্দান্ত। এটি এমাজন পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে উচ্চ রূপান্তরের হার অর্জনের সুযোগ করে দেয়। নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম এবং ভালো সমর্থন সেবা সহ বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ফরম্যাট উপলব্ধ। তবে, এমাজন পণ্যের সাথে সম্পর্কিত কনটেন্ট না থাকলে কম লাভজনক হতে পারে।
সুবিধা:
- এমাজন পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে উচ্চ রূপান্তরের হার অর্জন করা যায়।
- নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম এবং ভালো সমর্থন সেবা।
- বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ফরম্যাট উপলব্ধ।
অসুবিধা:
- এমাজন পণ্যের সাথে সম্পর্কিত কনটেন্ট না থাকলে কম লাভজনক হতে পারে।
- কম ট্রাফিকের ওয়েবসাইটের জন্য কম লাভজনক হতে পারে।
৪. মনিট্যাগ – Monetag
প্রিমিয়াম বিজ্ঞাপনদাতাদের সাথে সংযুক্ত থাকায় এটি হাই কোয়ালিটি বিজ্ঞাপন এবং এআই-চালিত বিড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করে। স্বচ্ছ এবং বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম, তবে ইনস্ট্যান্ট যেকোনো ওয়েবসাইটই যোগ দিতে পারে এবং কম ট্রাফিকের ওয়েবসাইটের জন্য বেশি আয়ের উপযোগী নাও হতে পারে।
সুবিধা:
- প্রিমিয়াম বিজ্ঞাপনদাতাদের সাথে সংযুক্ত, ফলে হাই কোয়ালিটি বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়।
- এআই-চালিত বিড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করে।
- স্বচ্ছ এবং বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম।
- সহজেই অনুমোদন পাওয়া যায়।
অসুবিধা:
- কিছু বিজ্ঞাপন ইউজারকে বিরক্ত করতে পারে।
- কম ট্রাফিকের ওয়েবসাইটের জন্য উপযোগী নাও হতে পারে।
৫. ইজোয়িক – Ezoic
এআই ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের গতি বাড়িয়ে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স উন্নত করে এবং বিভিন্ন অ্যাড নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকায় সেরা সিপিএম (Cost Per Mille) পাওয়া যায়। সহজেই ব্যবহারযোগ্য ইন্টারফেস এবং ভালো সার্ভিস সাপোর্ট থাকলেও কিছু ওয়েবসাইটের জন্য অনুমোদন পাওয়া কঠিন হতে পারে এবং কিছু সিপিএম অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় কম হতে পারে।
সুবিধা:
- বিভিন্ন অ্যাড নেটওয়ার্ক এবং এক্সচেঞ্জের সাথে সংযুক্ত, ফলে সেরা সিপিএম (Cost Per Mille) পাওয়া যায়।
- এআই ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের গতি বাড়িয়ে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স উন্নত করে।
- সহজেই ব্যবহারযোগ্য ইন্টারফেস এবং ভালো সাপোর্ট সার্ভিস।
অসুবিধা:
- কিছু ওয়েবসাইটের জন্য অনুমোদন পাওয়া কঠিন হতে পারে।
- কিছু সিপিএম অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় কম হতে পারে।
আরও দেখুন – ফেসবুক থেকে আয় ২০২৪: কিভাবে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করা যায়?
৬. এড থ্রাইভ – AdThrive
বড় ওয়েবসাইটের জন্য উপযোগী এই নেটওয়ার্কটি উচ্চ রেজল্যুশনের বিজ্ঞাপন এবং ভালো সিপিএম অফার করে। নির্দিষ্ট মানের ও ট্রাফিকের ওয়েবসাইটই আমন্ত্রণ পায়, ফলে প্রতিযোগিতা কম থাকে। তবে, কেবল আমন্ত্রণপ্রাপ্ত ওয়েবসাইটই যোগ দিতে পারে এবং ছোট ও মাঝারি ওয়েবসাইটের জন্য উপযোগী না।
সুবিধা:
- উচ্চ রেজল্যুশনের বিজ্ঞাপন এবং ভালো সিপিএম অফার করে।
- নির্দিষ্ট মানের ও ট্রাফিকের ওয়েবসাইটই আমন্ত্রণ পায়, ফলে প্রতিযোগিতা কম।
- ডেডিকেটেড অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার সরাসরি সহায়তা করে।
অসুবিধা:
- কেবল আমন্ত্রণপ্রাপ্ত ওয়েবসাইটই যোগ দিতে পারে।
- ছোট ও মাঝারি ওয়েবসাইটের জন্য উপযোগী না।
৭. মিডিয়া ভাইন – Mediavine
লাইফস্টাইল, খাবার, ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগগুলিকে লক্ষ্য করে এই নেটওয়ার্কটি উচ্চ গুণমানের বিজ্ঞাপন এবং ভালো সাপোর্ট সার্ভিস প্রদান করে। কমিউনিটি ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম, ফলে শেখার ও সহযোগিতার সুযোগ থাকে। তবে, কেবল আমন্ত্রণপ্রাপ্ত ওয়েবসাইটই যোগ দিতে পারে এবং অন্যান্য বিষয়ক ওয়েবসাইটের জন্য উপযোগী না।
সুবিধা:
- লাইফস্টাইল, খাবার, ভ্রমণ ও প্যারেন্টিং বিষয়ক ব্লগকে লক্ষ্য করে।
- উচ্চ গুণমানের বিজ্ঞাপন এবং ভালো সাপোর্ট সার্ভিস প্রদান করে।
- সম্প্রদায়ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম, ফলে শেখার ও সহযোগিতার সুযোগ।
অসুবিধা:
- কেবল আমন্ত্রণপ্রাপ্ত ওয়েবসাইটই যোগ দিতে পারে।
- অন্যান্য বিষয়ক ওয়েবসাইটের জন্য উপযোগী না।
৮. টাবোলা এডস – Taboola
কন্টেন্ট ডিসকভারি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এটি আপনার ওয়েবসাইটে অন্যান্য আকর্ষণীয় কন্টেন্টের লিঙ্ক প্রদর্শন করে ব্যবহারকারীদের ধরে রাখে। নতুন দর্শকদের আকর্ষণ করে এবং ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ায়। তবে, কেবল ক্লিকের উপর ভিত্তি করে আয়, তাই কনভার্সন রেট গুরুত্বপূর্ণ এবং নিজের কন্টেন্টের ট্রাফিক হারানোর ঝুঁকি থাকে।
সুবিধা:
- আপনার ওয়েবসাইটে অন্যান্য আকর্ষণীয় কন্টেন্টের লিঙ্ক প্রদর্শন করে ব্যবহারকারীদের ধরে রাখে।
- নতুন দর্শকদের আকর্ষণ করে এবং ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ায়।
- বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্টের জন্য উপযোগী।
অসুবিধা:
- কেবল ক্লিকের উপর ভিত্তি করে আয়, তাই রূপান্তরের হার গুরুত্বপূর্ণ।
- নিজের কন্টেন্টের ট্রাফিক হারানোর ঝুঁকি থাকে।
৯. রেভেনিউ হিটস – RevenueHits
নতুন ওয়েবসাইটের জন্য সহজ বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ফরম্যাট এবং Pay-Per-Click, Pay-Per-Action ও Cost Per Mille (CPM) মডেল অফার করে। নতুন ওয়েবসাইটের জন্য সহজেই অনুমোদন পাওয়া যায়। তবে, নিম্নমানের বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সিপিএম অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় কম হতে পারে।
সুবিধা:
- বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ফরম্যাট সরবরাহ করে (পপ-আপ, পপ-আন্ডার, ইন-ব্যানার)।
- Pay-Per-Click, Pay-Per-Action ও Cost Per Mille (CPM) মডেল অফার করে।
- নতুন ওয়েবসাইটের জন্য সহজেই অনুমোদন পাওয়া যায়।
অসুবিধা:
- নিম্নমানের বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সম্ভাবনা রয়েছে।
- সিপিএম অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় কম হতে পারে।
১০. এডস্ট্রেরা – Adsterra
বিশ্বব্যাপী দর্শকগোষ্ঠী টার্গেট করার সুবিধা এবং বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ফরম্যাট সহ উচ্চ রূপান্তরের হারের সম্ভাবনা থাকলেও অনুমোদন প্রক্রিয়া কিছুটা কঠোর হতে পারে এবং কম ট্রাফিকের ওয়েবসাইটের জন্য লাভজনক নাও হতে পারে।
সুবিধা:
- বিশ্বব্যাপী দর্শকগোষ্ঠীকে টার্গেট করার সুবিধা।
- বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ফরম্যাট সরবরাহ করে।
- উচ্চ রূপান্তরের হারের সম্ভাবনা রয়েছে।
- সহজেই অনুমোদন দেয়।
অসুবিধা:
- কিছু এডের কারণে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স খারাপ হতে পারে।
- কম ট্রাফিকের ওয়েবসাইটের জন্য লাভজনক নাও হতে পারে।
আরও দেখুন – ব্লগিং কিভাবে শুরু করবেন? লেখালেখি করে টাকা আয় ২০২৩
উপসংহার
গুগল এডসেন্স ছাড়াও অনেক দারুণ বিকল্প রয়েছে, যা আপনার ওয়েবসাইট থেকে ভালো আয় করতে সাহায্য করতে পারে। আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু, ট্রাফিক এবং লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে সবচেয়ে উপযোগী প্ল্যাটফর্মটি বেছে নিন। এই পোস্টটি আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে বলে আশা করি।
এছাড়াও মনে রাখবেন, কোনো একটি প্ল্যাটফর্মই একাই যথেষ্ট নয়। সেরা ফলাফলের জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং ক্রমাগত আপনার কৌশল পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে, নিচে মন্তব্য করুন!
ভালো ও কাজের কনটেন্ট।