আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য ডকুমেন্ট। আপনার পাসপোর্টের বৈধতা এবং সঠিকতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আপনার ভ্রমণকে সহজ করে তোলে এবং অপ্রত্যাশিত জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে। এই নিবন্ধে, আমরা ২০২৪ সালে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব, যার মধ্যে রয়েছে পাসপোর্ট নাম্বার ব্যবহার করে পাসপোর্ট চেক করার পদ্ধতি।
অনলাইনে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম ২০২৪
MRP Passport, বাংলায় “মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট” (MRCP) হলো একটি আধুনিক পাসপোর্ট যাতে অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন (OCR) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তিটি পাসপোর্টে থাকা ব্যক্তির তথ্য যেমন নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ইত্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পড়তে পারে।
এমআরপি পাসপোর্ট জালিয়াতি প্রতিরোধে সাহায্য করে কারণ এতে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যেমন হলোগ্রাম এবং মাইক্রোপ্রিন্ট রয়েছে।এমআরপি পাসপোর্ট সীমান্ত পারাপারে দ্রুত গতিসহত প্রক্রিয়াজাতকরণের অনুমতি দেয় কারণ কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাসপোর্টে থাকা তথ্য পড়তে পারে। এমআরপি পাসপোর্ট বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে স্বীকৃত, যা ভ্রমণকে আরও সহজ করে তোলে। বাংলাদেশে এমআরপি পাসপোর্ট চালু হয় ২০১০ সালে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কেবল এমআরপি পাসপোর্টই জারি করে।
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চেক করার উপায়
e-Passport বা ই-পাসপোর্ট হল বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জারি করা একটি আইসিএও (ICAO) অনুগামী, মেশিন রিডেবল এবং বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট। এটি ঐতিহ্যবাহী পাসপোর্টের একটি উন্নত সংস্করণ, যা নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং জালিয়াতি প্রতিরোধ করে।
পাসপোর্টের পৃষ্ঠায় থাকা লেখাটি একটি মেশিন দ্বারা পড়া যায়, যা বিমানবন্দরে দ্রুত এবং সহজ ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। পাসপোর্টে চিপের মধ্যে পাসপোর্টধারীর আঙুলের ছাপ বা মুখের ছবির মতো বায়োমেট্রিক তথ্য থাকে। এই তথ্যটি ভ্রমণকারীদের সনাক্তকরণে আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। e-Passport-এ জালিয়াতি প্রতিরোধে বিভিন্ন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, যেমন হলোগ্রাম, মাইক্রোপ্রিন্ট এবং জলীয় চিহ্ন, থাকে।
বাংলাদেশ ২০১০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসাবে সমস্ত নাগরিকদের জন্য e-Passport জারি করতে শুরু করে। আপনি যদি বাংলাদেশী নাগরিক হন এবং আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা e-Passport এর জন্য আবেদন করতে চান, তাহলে আপনি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর: http://www.dip.gov.bd/ এর ওয়েবসাইট পরিদর্শন করতে পারেন।
পাসপোর্ট চেক করার কারণ
আপনার পাসপোর্ট চেক করার বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:
ভ্রমণের পূর্বে নিশ্চিত হওয়া যে আপনার পাসপোর্ট ভ্রমণের জন্য বৈধ এবং মেয়াদ শেষ হয়নি। নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে, এটি দ্রুত জানাতে এবং প্রতিস্থাপনের জন্য আবেদন করতে। আইনি প্রয়োজনীয়তা কিছু ক্ষেত্রে, আপনার পাসপোর্ট আইনি প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন চাকরির আবেদন বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সময়।
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম:
১. ই-পাসপোর্ট অনলাইনে পাসপোর্ট চেক
- ই-পাসপোর্ট অনলাইন রেজিস্ট্রেশন পোর্টাল (https://www.epassport.gov.bd/authorization/application-status) এ যান।
- “অ্যাপ্লিকেশন স্ট্যাটাস চেক” ট্যাবে ক্লিক করুন।
- আপনার পাসপোর্ট নম্বর এবং জন্ম তারিখ প্রবেশ করুন।
- “ক্যাপচা” কোড টাইপ করুন এবং “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন।
- আপনার পাসপোর্টের স্ট্যাটাস, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এবং অন্যান্য তথ্য প্রদর্শিত হবে।
২. BMET ওয়েবসাইট থেকে পাসপোর্ট চেক
- বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (BMET) (https://www.bmet.gov.bd/) ওয়েবসাইটে যান।
- “পাসপোর্ট” ট্যাবে ক্লিক করুন।
- “পাসপোর্ট ট্র্যাকিং” অপশনটি নির্বাচন করুন।
- আপনার পাসপোর্ট নম্বর এবং জন্ম তারিখ প্রবেশ করুন।
- “সার্চ” বাটনে ক্লিক করুন।
- আপনার পাসপোর্টের স্ট্যাটাস এবং ডেলিভারির তথ্য প্রদর্শিত হবে।
৩. এসএমএস করে পাসপোর্ট চেক
পাসপোর্ট চেক করতে আরেকটি সহজ উপায় হলো এসএমএস। আপনার মোবাইল ফোন থেকে “EPASS <পাসপোর্ট নম্বর> <জন্ম তারিখ (YYYYMMDD)>” টাইপ করে 16262 নম্বরে এসএমএস পাঠান। আপনার পাসপোর্টের স্ট্যাটাস সম্পর্কে একটি এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারবেন।
পাসপোর্ট নাম্বার ব্যবহার করে অনলাইনে পাসপোর্টের সম্পূর্ণ তথ্য যাচাই করা সম্ভব নয়। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো কেবল আপনার পাসপোর্টের স্ট্যাটাস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য প্রদান করে। আপনার পাসপোর্টের হারানো বা চুরি হওয়া সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে, অবিলম্বে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করুন এবং পাসপোর্ট অফিসকে জানান।
অন্যান্য পদ্ধতিতে পাসপোর্ট চেক করার উপায়
ডেলিভারি স্লিপ: যদি আপনি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে থাকেন, তাহলে আপনাকে একটি ডেলিভারি স্লিপ দেওয়া হবে। এই স্লিপে থাকা তথ্য ব্যবহার করে ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার পাসপোর্টের ডেলিভারি স্ট্যাটাস ট্র্যাক করতে পারবেন।
পাসপোর্ট অফিস: আপনি সরাসরি আপনার নিকটতম পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট নাম্বার এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন, জাতীয় পরিচয়পত্র) সহযোগে কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তারা আপনার পাসপোর্টের স্ট্যাটাস এবং বৈধতা যাচাই করবেন।
পাসপোর্ট বৈধতা চেক করার টিপস
- মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ: আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখটি নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করুন এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদন করুন। ভ্রমণের সময় কিছু দেশের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকতে পারে, তাই আগে থেকেই তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
- ক্ষতিগ্রস্ত পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্ট যদি ক্ষতিগ্রস্ত, নষ্ট বা চুরি হয়ে যায়, তাহলে অবিলম্বে পাসপোর্ট অফিসকে জানান এবং প্রতিস্থাপনের জন্য আবেদন করুন।
- পাসপোর্টে থাকা তথ্যের যাচাই: আপনার পাসপোর্টে থাকা সমস্ত তথ্য (যেমন, নাম, জন্ম তারিখ, ছবি) সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করুন। কোনো ভুল থাকলে, যথাযথ সংশোধনের জন্য পাসপোর্ট অফিসের সাথে যোগাযোগ করুন।
পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম ২০২৪: FAQ
প্রশ্ন: অনলাইনে পাসপোর্ট চেক করার সুবিধা কি কি?
উত্তর: অনলাইনে পাসপোর্ট চেক করার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যেমন: সুবিধাজনক: আপনি ঘরে বসে, লাইনে দাঁড়ানো ছাড়াই আপনার পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক করতে পারেন। দ্রুত: অনলাইন পদ্ধতি দ্রুত এবং সহজ। সঠিক তথ্য: অনলাইন পোর্টালগুলিতে আপনার পাসপোর্টের স্ট্যাটাস, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এবং অন্যান্য তথ্যের সঠিক তথ্য প্রদান করে।
প্রশ্ন: পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে অনলাইনে পাসপোর্টের সম্পূর্ণ তথ্য কি যাচাই করা সম্ভব?
উত্তর: না, পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে অনলাইনে পাসপোর্টের সম্পূর্ণ তথ্য যাচাই করা সম্ভব নয়। অনলাইন পদ্ধতি কেবল আপনার পাসপোর্টের স্ট্যাটাস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য প্রদান করে।
প্রশ্ন: আমার পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে কি করবো?
উত্তর: আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে অবিলম্বে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করুন এবং পাসপোর্ট অফিসকে জানান।
প্রশ্ন: আমার পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। রিনিউ করার জন্য আবেদন করার সর্বশেষ সময় কখন?
উত্তর: আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে রিনিউ জন্য আবেদন করা উচিত।
প্রশ্ন: পাসপোর্ট রিনিউ জন্য আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?
উত্তর: পাসপোর্ট রিনিউ জন্য আবেদন করার জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে: পুরাতন পাসপোর্ট, পূরণকৃত আবেদনপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি, প্রয়োজনীয় ফি।
প্রশ্ন: নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?
উত্তর: নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে: পূরণকৃত আবেদনপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, জন্ম সনদপত্রের ফটোকপি, স্কুল সনদপত্রের ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি, প্রয়োজনীয় ফি।
প্রশ্ন: পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পর কতদিন সময় লাগে?
উত্তর: পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পরে আপনার পাসপোর্ট পেতে লাগা সময় বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে, যেমন:
- আবেদনের ধরণ (নতুন পাসপোর্ট, রিনিউ, ইত্যাদি)
- আবেদন জমা দেওয়া অফিসের কর্মচাঞ্চল্য
- ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া
সাধারণত, নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পরে ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে এবং পাসপোর্ট রিনিউয়ের জন্য আবেদন করার পরে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে পারবেন। তবে, সঠিক সময়ের জন্য আপনাকে সরাসরি পাসপোর্ট অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া ইমারজেন্সি প্রয়োজনে ৫ দিনে পাসপোর্ট পাওয়া যায়, এজন্য বাড়তি ফি প্রদান করতে হবে।
আরও দেখুন – বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়াশোনার যোগ্যতা, খরচ ও আবেদন প্রক্রিয়া
আপনার পাসপোর্টের বৈধতা নিশ্চিত করা এবং এটি সুরক্ষিত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে প্রদত্ত তথ্য আপনাকে পাসপোর্ট চেক করার বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, পাসপোর্ট নাম্বার ব্যবহার করে অনলাইনে পাসপোর্টের সম্পূর্ণ তথ্য যাচাই করা সম্ভব না। যদি আপনার পাসপোর্টের স্ট্যাটাস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য বা সন্দেহ থাকে, তাহলে সরাসরি পাসপোর্ট অফিসের সাথে যোগাযোগ করা বা তাদের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করা উচিত।