নতুন ব্লগারদের ভুল – দিন দিন বাড়ছে ব্লগ সাইট, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সব ব্লগার। কিন্তু কতজনই বা সফল হচ্ছে? যারা হচ্ছে না তাদের সমস্যা কি?
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আজকের এই আর্টিকেলে আমি নতুন ব্লগারদের করা ৯ টি ভুল নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি যারা নতুন ব্লগার তারা এই বিষয়গুলো খেয়াল রেখে ব্লগিং করবেন।
কনটেন্ট সূচি
১. ডিজাইন বারবার পরিবর্তন
প্রথমত এই ভুলটি আমিও করে এসেছি। নতুন ব্লগারেরা কোন ব্লগার টেমপ্লেট বা ওয়ার্ডপ্রেস থিম দেখলেই সেটা ব্যবহার করে। বিভিন্ন ধরনের প্লাগিনের ইনস্টল করে দেখে, অনেক ধরনের উইজেট/গ্যাজেট যোগ করে আবার ডিলিট করে, ইডিট করে। বলতে গেলে তারা সব সময় তাদের ব্লগ সাইটটিকে দৌড়ের উপর রাখে। প্রথমত এতে ব্লগটি দেখতে আনপ্রফেশনাল লাগে, দ্বিতীয়ত ভিজিটরেরা দ্বিধায় পড়ে যায়, তৃতীয়ত সার্চ ইঞ্জিনগুলো সাইটটিকে নির্মাণাধীন (under maintenance) ভেবে নেয়; যা এসইও এর উপর বাজে একটা প্রভাব বিস্তার করে। আর ভিজিটরদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
তাই প্রথমত বারবার সাইটের ডিজাইন পরিবর্তন করা যাবে না, আপনি যদি আপনার নিজের সাইটের ডিজাইন নিয়েই সারাদিন ভাবেন তাহলে ব্লগিং কখন করবেন? প্রথমত ব্লগ সাইটের ডিজাইন এত ডাইনামিক হওয়ার কোন দরকার নেই, একটু সিম্পল এরমধ্যে সাজানো-গোছানো হলেই যথেষ্ট।
যেভাবে ব্লগার সাইটে স্পিড বাড়াবেন – Blogger Speed Optimization
২. কোয়ালিটির থেকে পরিমাণকে গুরত্ব দেওয়া
আমি অনেক নতুন ব্লগারদের দেখেছি যারা নতুন ব্লগ সাইট খুলেই একদম উরাধুরা পোস্ট করা শুরু করে। অনেকেই ভাবে যত বেশি কনটেন্ট তত বেশি ভিজিটর। তা ঠিক, বেশি কনটেন্ট হলে আপনি অনেক বেশি ভিজিটর পাবেন তবে এত বেশি পরিমাণ কনটেন্ট লেখার কারণে দেখা যায় এগুলো বেশিরভাগই কপি কনটেন্ট (plagarised) বা ইউনিক কোন কনটেন্ট না। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায় বেশিরভাগ কনটেন্ট অনেক কম ওয়ার্ডের হয়ে থাকে (১০০-২০০ ওয়ার্ড)। এতো কম শব্দের কনটেন্ট কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন ভালো চোখে দেখে না।
যেহেতু কনটেন্ট ইজ কিং তাই এটার কোয়ালিটি বজায় রাখাটা জরুরি। এজন্য কোয়ালিটির গুরুত্ব বেশি দেওয়া উচিত পরিমাণের থেকে। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘দুষ্টু গরুর চাইতে শূন্য গোয়াল ভালো’ এক্ষেত্রে আমরা তো আর আমাদের ব্লগকে শূন্য রাখবো না, আমরা কোয়ালিটি কনটেন্ট লিখার চেষ্টা করবো।
আরও দেখুন: এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লেখার নিয়ম ২০২২
৩. সবসময় দ্বিধায় থাকা
নতুন ব্লগারদের একটা বড় সমস্যা হলো এরা সবসময়ই দ্বিধায় থাকে। এরা উমুক, তুমুক সফল ব্লগারের কাছে পরামর্শ নেয় কিন্তু কি করবে এটাই ভেবে পায়না। কোথায় আছে নানা মুনির নানা মত, অর্থাৎ একজনের সফল হওয়ার ধরনের রকম আরেকজনের সফল হওয়ার ধরণ অবশ্যই আরেক রকম হবে। এত জনের গাইডলাইন নিয়ে আসলে কাজ করা যায় না।
আপনি নিজে জানেন আপনি কি কি পারেন আর সেটা নিয়ে কাজ করলেই আপনি সফল হবেন ইনশাআল্লাহ। তবে অনেকেই দেখেছে বিভিন্ন ব্লগার ফোরামে জানতে চায় সে কোন নিশ নিয়ে কাজ করবে।
আমার কাছে এটা অবাক লাগে, কারণ যে নিজেই জানে না সে কি নিয়ে ব্লগিং করবে তাহলে তার ব্লগিং করার কি দরকার!
অনেককেই দেখেছি আজকে এক টপিক নিয়ে কাজ করছে কালকে আবার আরেক টপিক নিয়ে কাজ করছে। এগুলো করা যাবে না, কারণ এতে শুধু সময় নষ্ট হয় পারতপক্ষে কিছুই হয় না। সকল দ্বিধা মন থেকে দূর করে যেকোনো একটি টপিক নিয়ে কাজ করাই উত্তম। আর কোন সমস্যা হলে তো ইউটিউব বাবা আছেই!
৪. ধারাবাহিকতার অভাব
নতুন ব্লগারসহ পুরাতন ব্লগারদের মাঝেও এই সমস্যাটা রয়েছে। অনেকেই নতুন ব্লগ খুলেই প্রথম সপ্তাহে ধরেন ১০/১৫ টা পোস্ট করে ফেলে কিন্তু তারপর আর খোঁজ নেই! এভাবে আসলে ব্লগিং হয় না, ব্লগিং করতে হলে প্রথমত ধারাবাহিক ভাবে কাজ করতে হবে।
অনিয়মিত হলে যেমন আপনি ভিজিটর হারাবেন পাশাপাশি আপনার এসইও -তেও একটা খারাপ প্রভাব পড়বে।
আপনি যদি প্রতিদিন একটা করে পোষ্ট করেন তাহলে অবশ্যই প্রতিদিন একটা করে পোষ্ট করার চেষ্টা করবেন। তবে আমি সাজেস্ট করবো প্রতি তিন দিনে একটা করে কোয়ালিটি আর্টিকেল লিখবেন। প্রথম দিন রিসার্চ, দ্বিতীয় দিন প্রকাশ আর তৃতীয় দিনে লিংক বিল্ডিং। এভাবে ধারাবাহিক ভাবে কাজ করলে আপনিও সফল হতে পারবেন।
৫. একাধিক ক্যাটাগরিতে কাজ করা
নতুন ব্লগারদের ক্ষেত্রে দেখা যায় এরা বিভিন্ন টপিক নিয়ে কাজ শুরু করে অথচ তার শুরু করা উচিত যেসব বিষয়ে তার ভালো জ্ঞান রয়েছে। অনেকের ব্লগিং ক্যাটাগরি থাকে ২০টির উপরে! ২০ টি ক্যাটাগরিতে ধারাবাহিক আর্টিকেল দেওয়া সম্ভব না বা কঠিন। তাই এতো ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ না করে আপনার নিশ সম্পর্কিত নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করুন।
আমার সাজেস্ট থাকবে পার্সোনাল ব্লগ হলে সর্বোচ্চ ১০ টি ক্যাটাগরি রাখতে পারেন।
৬. ভিজিটর নিয়ে হতাশ হয়ে যাওয়া
নতুন ব্লগারেরা বলতে গেলে ভিজিটর নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকে কনটেন্টের থেকে। অনেকে বারবার ভিজিটর চেক করতে থাকে, অ্যালেক্সা, পেজরেঙ্ক এগুলোও বারবার দেখে আর হতাশ হয়ে ব্লগিং ছেড়ে দেয়। প্রথমত ভিজিটরতো বাংলাদেশের সেরা ব্লগারের ব্লগেও ছিলো না, সবকিছু শূন্য থেকেই শুরু হয়।
মূলত ব্লগিং একটা ধৈর্য্যের খেলা! তাই ধৈর্য্য ধারণ করে ভালো মানের কোয়ালিটি কনটেন্ট দিতে থাকুন অবশ্যই ভিজিটর পাবেন। আপনার ব্লগে যখন ৪০/৫০ টি কনটেন্ট থাকবে তখন এমনিতেই ভিজিটর আসবে তাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
৭. একাধিক ব্লগ চালানোর চেষ্টা
নতুন ব্লগারদের উৎসাহ থাকে বেশি তাই এরা বিভিন্ন টপিক নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা থেকে একাধিক ব্লগ ওপেন করে। একটা ব্লগ টেক, আরেকটা স্বাস্থ্য, আরেকটা বাংলা, আরেকটা ইংরেজি, আরেকটা নিউজ! ওহ মায় গড!
একটা সময় দেখা যায় কোনো ব্লগ থেকেই সফল হওয়া যাচ্ছে না তারপর আর ব্লগিং করার ইচ্ছাই মরে যায়। মূলত একাধিক সাইট নিয়ে কাজ করাটা শুধু সময়ের অপচয় মাত্র।
মাথায় রাখবেন একাধিক নৌকায় পা রেখে সঠিকভাবে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। তাই যে সময়টুকু একাধিক ব্লগে দিচ্ছেন সেই সময়টুকু একটা ব্লগ নিয়ে কাজ করুন।
৮. আগেই টাকা আয়ের চিন্তা
এটা স্বীকার করতেই হবে প্রত্যেকটা ব্লগারের দিনশেষে কিছু আয় করার ইচ্ছা থাকে। তবে আয় করার জন্য একটা পর্যায়ে যেতে হয়। নতুন ব্লগারদের মাঝে একটা প্রবনতা দেখা যায় তারা আগেই টাকা ইনকামের চিন্তায় মগ্ন থাকে, তারা রাতারাতি (overnight) ব্লগ থেকে ইনকামের স্বপ্ন দেখে।
একটু আগেই বললাম আগে একটা পর্যায়ে যেতে হবে আর সে পর্যায়ে যেতে লাগে সময়, শ্রম, ইফোর্ট এবং ধারাবাহিকতা।
এই আর্টিকেল যখন লিখি সে মুহূর্তে আমার এই ব্লগের বয়স প্রায় দুই মাস আর ইনকাম শূন্য! তাই শুরুতেই ব্লগ থেকে আয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে, কনটেন্ট- এ মনোযোগ দেওয়াটাই বেটার। কারণ অপেক্ষা আর কষ্টার্জিত জয় অবশ্যই বেশি স্বাদের হয়।
৯. সঠিকভাবে এসইও (SEO) না করা
বেশির ভাগ নতুন ব্লগারদের বড় সমস্যা এটি। উপরের সবকিছু মেনে চলা বৃথা হয়ে যায় শুধু এটা মানতে না পারলে।
ব্লগিং হলো একটা ব্যাটেল গ্রাউন্ড, এখানে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিকে থাকতে হয়। এজন্য দরকার সঠিকভাবে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজগুলো করা। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ্ড আর্টিকেল লিখা, লিংক বিল্ডিং, ব্যাকলিংকিং সহ অন্যান্য কাজ করা জরুরী।
অনেক নতুন ব্লগার এই এসইও সম্পর্কে তেমন আগ্রহ দেখায় না বা জানে না। আমার ব্যক্তিগত সাজেস্ট সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের অত্যন্ত বেসিক না জেনে ব্লগিং করার দরকার নেই। নাহলে দিনশেষে শুধু হতাশই হতে হবে।
তো এই ছিলো নতুন ব্লগারদের করা কিছু ভুল যেগুলো আমিও করে এসেছি বা এখনও করছি। নতুন ব্লগারদের কাছে সাজেশন রইলো এ ভুল গুলো কাটিয়ে উঠে সঠিকভাবে ব্লগিং শুরু করলে অবশ্যই সফল হতে পারবেন। আর ব্লগিং সম্পর্কিত কোনো মন্তব্য থাকলে কমেন্টে জানান।
কোনো ধরনের সাহায্য বা সমস্যার জন্য আমাদের ফেসবুক পেইজে যোগাযোগ করতে পারো আমি সেখানে সব সময় আছি। আর এ পোস্টটি চাইলে তোমার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারো।