AI- Powered Digital Media & Learning Platform
AI- Powered Digital Media & Learning Platform

ডোমেইন কেনার আগে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি

সফল অনলাইন উপস্থিতি গড়ার ক্ষেত্রে সঠিক ডোমেইন নির্বাচন একটি মৌলিক কৌশলগত সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিগত ব্লগ, পূর্ণাঙ্গ ব্যবসার ওয়েবসাইট, কিংবা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম – যে ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করুন না কেন, আপনার লক্ষ্য অডিয়েন্সের কাছে স্মরণীয় ও প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করা জরুরি। এই আর্টিকেলে, আমরা ডোমেইন নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করব, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ডোমেইন, নির্বাচন প্রক্রিয়া, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা।

ডোমেইন কি? ডোমেইনের বিভিন্ন অংশ?

ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে, একটি ডোমেইন হলো মানুষ পাঠযোগ্য একটি ঠিকানা। যা ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে কোনো ওয়েবসাইটের স্বতন্ত্র পরিচয় গঠনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের সবার ওয়েবসাইটগুলোর মূলত নিউমেরিক আইপি এড্রেসে হোস্ট করা হয়। যেমন: 104.652.14.58 যা মনে রাখা কঠিন। ডোমেইনের কাজ হলো, এই সহজে মনে রাখা যায়না এমন নাম্বারের পরিবর্তে ব্যবহৃত ইউনিক নাম।

domain part

উপরের ডোমেইন খেয়াল করুন এটি হচ্ছে আমাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এর ডোমেইন এটার দুইটা পার্ট এর মধ্যে একটা হচ্ছে আমাদের নাম bongowiki নামের এই অংশটুকু কে বলা হয় সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন। নামের পরে যে অংশটুকু রয়েছে অর্থাৎ .com একে বলা হয় টপ লেভেল ডোমেইন। এ দুটিই হচ্ছে প্রধানত একটি ডোমেইনের দুইটি অংশ।

আরও জানুন- ব্লগার vs ওয়ার্ডপ্রেস – ব্লগার ও ওয়ার্ডপ্রেসের মধ্যে কোনটি সেরা?

ডোমেইন ধরন

ডোমেইন নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন ধরনের ডোমেইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা গঠন করা প্রয়োজন। প্রধান তিনটি ডোমেইন ধরন হল:

১. টপ লেভেল ডোমেইন (TLD)

এগুলি .com, .net, এবং .org এর মতো সবচেয়ে পরিচিত এবং বহুমুখী এক্সটেনশন, যা বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইটের জন্য উপযুক্ত। সাধারণত .com ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, .net কোন নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠানের সাথে রিলেটেবল আর .org মূলত কোন অর্গানাইজেশনকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়।

২. কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন (ccTLD)

নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলকে লক্ষ্য করার জন্য .us (যুক্তরাষ্ট্র), .uk (যুক্তরাজ্য), বা .ca (কানাডা) এর মতো ccTLD ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে .com.bd, .org.bd

৩. জেনেরিক টপ লেভেল ডোমেইন (gTLD)

.blog, .tech, বা .shop এর মতো gTLDগুলি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে নির্দেশ করে, যা আপনার ওয়েবসাইটের প্রাথমিক ফোকাস তুলে ধরতে সহায়ক। এ ধরনের ডোমেইনগুলো কিওয়ার্ডের উপর ভিত্তি করে। তাই মর্ডান ওয়েবসাইট গুলোতে এ ধরনের ডোমেইন বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায়।

কোন ধরনের ডোমেইন নেওয়া উচিত?

যদিও ডোমেইনের এক্সটেনশন আপনার ব্যবসাকে সরাসরি প্রভাবিত করে না। তবুও আপনাকে মানুষের অভ্যস্ততাকে গুরুত্ব দিতে হবে। একটু খেয়াল করলে বুঝবেন আমাদের আশেপাশের সাধারণ মানুষ জন ওয়েবসাইট বলতে .com ডোমেইনকেই বোঝায়। তাই এক্ষেত্রে সাধারণের বিশ্বাসযোগ্যতা পেতে ডটকম ডোমেইন নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি আপনাকে পরামর্শ দিব।

কিন্তু আপনি যদি ডটকম ডোমেইন অ্যাভেলেবল না পান তাহলে বাংলাদেশের ডোমেইন নিতে পারেন। তবে আমার পক্ষ থেকে সবথেকে বেশি সাজেশন থাকবে, আপনি আপনার বিজনেসের কিওয়ার্ডকে ফোকাস করে যে কোনো ডোমেইনকে নিতে পারেন। কারণ এক্সটেনশন খুব একটা বেশি ম্যাটার করে না। এমনকি গুগলে বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে এসইওর ক্ষেত্রেও ডোমেইন এক্সটেনশন গুলোর সরাসরি কোন ভূমিকা নেই।

ডোমেইন নেওয়ার সময় যে ৫ বিষয় অবশ্যই খেয়াল করবেন

এতক্ষন আমরা টপ লেভেল ডোমেইন অর্থাৎ ডোমেইন এক্সটেনশন নিয়ে কথা বলছিলাম। এখন কথা বলবো সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন বা ডোমেইনের নাম নিয়ে। ডোমেইনের নাম নির্বাচনের সময় নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরী:

প্রাসঙ্গিক ও সহজ নামের ডোমেইন কিনুন

এমন একটি ডোমেইন নাম নির্বাচন করুন যা আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু বা উদ্দেশ্যকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে এবং সহজে মনে রাখা যায়। চেষ্টা করবেন পাশ থেকে ৬ অক্ষরের মধ্যে ডোমেইনটি নিতে যেন সহজেই মানুষ এটিকে মনে রাখতে পারে।

যদি আপনি কোনো ব্যবসার জন্য ডোমেইন নির্বাচন করছেন, তাহলে নিশ্চিত করুন যে এটি আপনার ব্র্যান্ড নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ডোমেইন এক্সটেনশন যাইহোক আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তুর সাথে মিলে এমন নাম নির্বাচন করুন।

হাইফেন ও নম্বর ব্যবহার এড়িয়ে চলুন

ডোমেইন নামে হাইফেন বা নম্বর ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলি স্মরণ করা ও টাইপ করা কঠিন হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, কাঙ্ক্ষিত ডোমেইনটি না পেয়ে অনেকে হাইফেন ইউজ করে। যেমন: goo-gle.com, এরকম ডোমেইন নিলে এসইওর জন্যও ভালো হবে না। উল্টো স্প্যাম বা ফিশিং হিসেবে মার্ক হতে পারে। তাছাড়া থাকতে পারে ট্রেডমার্ক ঝামেলা।

ডোমেইনের ট্রেডমার্ক চেক করুন

আপনার নির্বাচিত ডোমেইন নাম যেন কোনো বিদ্যমান ট্রেডমার্ক লঙ্ঘন না করে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। পুরাতন ডোমেইন নেওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো খোজ নিন। এজন্য ট্রেডমার্ক ওয়েবসাইট থেকে ট্রেডমার্ক কিনা ধারণা নিতে পারেন।

ডোমেইনটি আগে কোন কাজে ব্যবহার করেছে সেটি চেক করুন

আপনার ডোমেইনটি আগে ব্যবহার হয়েছে কিনা সেটিও জানা জরুরী। কারণ ডোমেইনটি ইলিগ্যাল বা এডাল্ট ওয়েবসাইটে ইউজ করা হলে সেটি নিয়ে কাজ করা কোন ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারেনা। এজন্য আপনার ডোমেইনটি আগে কোন ওয়েবসাইটে ছিল সেটি জেনে নিন। এজন্য ইন্টারনেট আর্কাইভ ওয়েবসাইট থেকে চেক করে নিন – archive.org

domain archive check

ডোমেইনটি ফেসবুক বা গুগল অ্যাডসেন্স ব্লক কিনা চেক করুন

আপনি বিজনেস করতে চাইলে ফেসবুক পেইজভিত্তিক কাজ অবশ্যই করতে হবে। এজন্য ফেসবুকে ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করার প্রয়োজন পরে। এজন্য ডোমেইন ফেসবুকে ব্লক করা কিনা তা জানা জরুরী। এজন্য ফেসবুক শেয়ারিং ডেবাগিং ওয়েবসাইট থেকে চেক করে নিন। যদিও লিংক শেয়ারিং ব্লক হলে আপিল করে ডোমেইন আনব্লক করা যায়।

ডোমেইন চেক - facebook debugger tool

আমাদের মধ্যে অনেকেই ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করেন গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে। এরকম হলে আগেই এডসেন্স ব্লক কিনা তা চেক করা উচিৎ। নাহলে পরে পুরো পরিশ্রমই বৃথা যাবে। এডসেন্স ব্লক কিনা সেটি চেক করতে – https://adsensechecker.com লিঙ্কে ক্লিক করুন।

ডোমেইন চেক - adsense checker tool

আরও পড়ুন- ব্লগিং কিভাবে শুরু করবেন? লেখালেখি করে টাকা আয় ২০২৩

ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য বিষয়

হ্যাসেল বিহীন ডোমেইন কেনার ও কার্যকরী ডোমেইন ম্যানেজমেন্টের জন্য GoDaddy, Namecheap, বা Bluehost এর মতো নামকরা রেজিস্ট্রার নির্বাচন করুন। তবে এগুলোতে ডোমেইন নেওয়ার জন্য আপনার পেমেন্ট সমস্যা হতে পারে। এজন্য আপনি বাংলাদেশী ডোমেইন হোস্টিং কোম্পানি থেকে সহজেই ডোমেইন কিনতে পারবেন বিকাশ, নগদ বা রকেট পেমেন্ট করার মাধ্যমে।

এছাড়া ডোমেইন গোপনীয়তা রক্ষা, SSL সার্টিফিকেট, এবং নির্ভরযোগ্য কাস্টমার সাপোর্টের মতো অতিরিক্ত সেবা বিবেচনা করুন।

মূল্য ও রিনিউ খরচ সম্পর্কে জানা

  • মূল্য তুলনা: একই ডোমেইন এক্সটেনশনের জন্য বিভিন্ন রেজিস্ট্রারের মূল্য ভিন্ন হতে পারে। বেশির ভাগ রেজিষ্টারে .com ডোমেইনের দাম ১০০০ টাকার আশেপাশে হয়ে থাকে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মূল্য তুলনা করুন এবং হিডেন ফিগুলির প্রতি লক্ষ্য রাখুন। বেশিরভাগ রেজিষ্টার প্রথম বছরের জন্য অনেক ফিচার ফ্রিতে দিতে পারে। পরবর্তী বছরে এগুলোর মূল্যও এড হতে পারে।
  • রিনিউ ফি: কিছু রেজিস্ট্রার প্রাথমিক ডোমেইন নেওয়ার পরে উচ্চতর রিনিউ ফি চার্জ করতে পারে। আপনার বাজেটে অপ্রত্যাশিত খরচ এড়াতে রিনিউ ফিগুলির বিষয়ে সচেতন থাকুন।

ডোমেইন সুরক্ষা ও গোপনীয়তা

ডোমেইনের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার জন্য নিচের তিনটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন —

  1. ডোমেইন গোপনীয়তা রক্ষা: আপনার ব্যক্তিগত তথ্য WHOIS ডাটাবেসে প্রকাশ্য হওয়া রোধ করতে ডোমেইন গোপনীয়তা রক্ষা সেবা ব্যবহার করুন।
  2. দু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন: আপনার রেজিস্ট্রারের সেটিংসের মাধ্যমে দু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) সক্রিয় করে ডোমেইনের নিরাপত্তা বাড়ান।
  3. রেজিস্ট্রার লক: ডোমেইন আমরা নিজেদের সুবিধামত এক রেজিস্ট্রার থেকে অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করতে পারি। অনিয়ন্ত্রিত ডোমেইন ট্রান্সফার ঠেকাতে রেজিস্ট্রার লক করে রাখুন। এতে আপনার একসেস ছাড়া থার্ড পার্টি কেউ ডোমেইন ট্রান্সফার করতে পারবে না।

সম্প্রসারণ ও ভবিষ্যৎ বিবেচনা

আপনার ওয়েবসাইট বা ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা থাকলে এমন একটি ডোমেইন নির্বাচন করুন যা ভবিষ্যতে আপনার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে। ডোমেইন রিনিউ পরিকল্পনা যথেষ্ট আগে থেকে করে রাখুন। মালিকানা হারানো এড়াতে রেজিস্ট্রার সাথে আপনার ডোমেইনের মেয়াদ চেক করুন।

শেষকথা

সঠিক ডোমেইন নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন ধরনের ডোমেইন, প্রাসঙ্গিক ও স্মরণীয় নাম, ডোমেইন প্রাপ্তি, ভালো রেজিস্ট্রার, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বিষয়গুলি বিবেচনা করে আপনি আপনার লক্ষ্য অনুযায় সঠিক ডোমেইন নির্বাচন করতে পারেন। রিসার্চ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনি সফল অনলাইন উপস্থিতির দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করতে পারবেন।

Share this article
Shareable URL
Prev Post

ব্লগিং কিভাবে শুরু করবেন? লেখালেখি করে টাকা আয় ২০২৪

Next Post

প্যাসিভ ইনকাম কি? সেরা ৫টি প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *