বক্স থেকে নতুন ফোন, ট্যাবলেট অথবা ল্যাপটপ বের করার সময় একটা বিশেষ ভাললাগা বোধহয় সবারই কাজ করে। সদ্য বক্স থেকে বের করা চকচকে নতুন ডিভাইসটি খুব অল্প সময়েই জীবনের অংশ হয়ে ওঠে।
কাজের শিডিউল হিসাব করা, স্মৃতি ধরে রাখা কিংবা বন্ধু-পরিজনের সাথে যোগাযোগ করা, এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নিয়ে নেয় নতুন ডিভাইসটি। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আজ আমরা প্রযুক্তির ওপর একটু বেশিই নির্ভরশীল। কাজের জন্য, পড়ালেখার জন্য, খেলার জন্য আমরা চাই আমাদের ডিভাইসগুলি যেন সব সময় নতুনের মত থাকে। কিন্ত এমনটা সব সময় সম্ভব হয় না।
আর সম্ভব না হওয়ার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে আমাদের কিছু অভ্যাস, যার ফলে আমাদের প্রিয় ডিভাইসের আয়ু কমে যায়। তবে সুখবর হচ্ছে, এসব সমস্যাজনক অভ্যাস সহজেই বদলানো যায়।
পড়তে থাকুনঃ পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে ৫টি করণীয়
জানা যাক এমনই ৫টি সমস্যাজনক অভ্যাসের কথা এবং এগুলি পরিবর্তনে কী করতে হবে আপনাকে।
১. ডিভাইসের জন্য নির্ধারিত চার্জার এবং ক্যাবল বা কর্ড ব্যবহার না করা
যখন আপনার ডিভাইসের ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে আর ধারেকাছে ডিভাইসের চার্জার নেই, তখন যেকোনো চার্জারই আপনার কাছে আকর্ষণীয় মনে হতে পারে। তবে সেই চার্জার যদি নির্ভরযোগ্য কোনো ব্র্যান্ডের না হয় আর সস্তা হয়, তাহলে মনে রাখবেন যে এগুলি মানদণ্ড মেনে তৈরি করা হয়নি।
এসব চার্জার বা চার্জারের মডেল কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায় না, যেমনটা সুপরিচিত ব্র্যান্ডের ফোনের সাথে সরবরাহ করা চার্জারের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
তাই অখ্যাত কোনো ব্র্যান্ডের চার্জার ব্যবহার করলে আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি ঠিকমত চার্জ তো হবেই না, বরং বিপদের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সঠিক ভোল্টেজ ও অ্যাম্পিয়ার না থাকায় এমন চার্জার আপনার ডিভাইসের ক্ষতি করতে পারে। এতে আপনার ডিভাইস গরম হয়ে যেতে পারে, এমনকি আগুনও ধরে যেতে পারে।
২. বেশি শক্তিশালী জীবাণুনাশক দিয়ে ডিভাইস পরিষ্কার করা অথবা ডিভাইস একেবারেই পরিষ্কার না করা
আপনার ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা গেমিং কনসোল সবকিছুতেই অগণিত ব্যাক্টেরিয়ার বসবাস। ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান এর একটি গবেষণায় দেখা যায়, একটা সাধারণ টয়লেট সিটের চেয়ে আমাদের হাতে থাকা ফোনে ১০ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে।
কী জঘন্য একটা বিষয় ভেবে দেখেছেন? আমরা দিনে প্রায় ৩০০ বারের মত নিজেদের মোবাইল ফোন হাতে নেই এবং সকল স্থানে মোবাইল ফোন নিয়ে যাই। এমনকি টয়লেটেও।
কেবল জীবাণু প্রতিরোধের জন্যেই ডিভাইস পরিষ্কার রাখতে হবে, তা কিন্তু নয়। নিয়মিত ধুলাবালি ও ময়লা পরিষ্কার রাখলে ডিভাইসের বিভিন্ন পোর্টের ভেতর ময়লা জমতে পারে না। ফলে ভেতরের যন্ত্রপাতি ভাল থাকে। এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে আপনার ডিভাইস আরো বেশি দিন নতুন থাকবে। তবে এই কাজ করার সঠিক এবং ভুল দুই ধরনের পদ্ধতিই আছে।
ডিভাইসের স্ক্রিন পরিষ্কারের জন্য ঘরদোর পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত শক্তিশালী জীবাণুনাশক ব্যবহার করলে স্ক্রিনের ক্ষতি হয়। সঠিক উপায় হচ্ছে, একটি মাইক্রোফাইবার বা সুতির কাপড়ে ৫০% ফোন পরিষ্কারের দ্রবণ দিয়ে আপনার ফোন এবং ল্যাপটপ পরিষ্কার করা।
আপনি নিজে চেষ্টা করেও ডিভাইসে বহুদিন ধরে জমে থাকা জীবাণু এবং ময়লা পরিষ্কার করতে পারেন। যদি আরো ভালভাবে ডিভাইস পরিষ্কার করতে চান, তবে বিষয়টি কোনো বিশেষজ্ঞের হাতে ছেড়ে দিন। এতে করে দুর্ঘটনাবশত আপনার ডিভাইসের ক্ষতি হবে না।
বিশেষজ্ঞ কাউকে দায়িত্ব দিলে তিনি আপনার ডিভাইসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেমন মাইক্রোফোন, স্পিকার, চার্জিং পোর্ট এর মত যন্ত্রাংশ সঠিক যন্ত্র ও কৌশল ব্যবহার করে পরিষ্কার করে দেবেন।
৩. সারারাত ধরে চার্জ দিয়ে রাখা
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাটারির চার্জ একেবারে শূন্য করে ফেলার পরে আবার শতভাগ চার্জ দেয়া ঠিক না। এমনটা বার বার করা হলে ব্যাটারির আয়ু কমে যায়। যদিও আমরা অনেকেই তা করে থাকি।
এখনকার বেশিরভাগ স্মার্টফোন সম্পূর্ণ চার্জ হতে ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টার মত সময় লাগে। তাই আপনার ফোন সারারাত ধরে চার্জ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এভাবে দীর্ঘক্ষণ চার্জে ফেলে রাখলে ব্যাটারির আয়ু কমে যায়। ব্যাটারির আয়ু বাড়াতে ডিভাইসের চার্জের পরিমাণ ০% বা ১০০% এর কাছাকাছি যেতে দেয়া উচিৎ না।
তাই সব সময় চেষ্টা করুন আপনার ডিভাইসের চার্জ ৪০-৮০% এর মধ্যে রাখতে অথবা ঘুমাতে যাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা আগে চার্জ দিতে।
এই নিয়ম মেনে চললে আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি অনেক দিন টিকে থাকবে। বর্তমান সময়ের কিছু স্মার্টফোনে চার্জ-ডিলে (Charge Delay) ফিচার থাকে। এর কাজ হচ্ছে ব্যাটারি অতিরিক্ত চার্জ হওয়া থেকে রক্ষা করা। তবে আপনি যদি কোনো ব্যাটারি বেশিদিন ব্যবহার করতে চান, তবে চার্জের পরিমাণ ৪০ থেকে ৮০ শতাংশে রাখার নিয়ম মেনে চলুন।
৪. ডিভাইস রিস্টার্ট করতে ভুলে যাওয়া
বিরতি আমাদের সবারই দরকার, আর আপনার ডিভাইসও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতি সপ্তাহে ডিভাইস যদি একবার রিস্টার্ট করা হয়, তবে তা ডিভাইসের মেমোরির কার্যক্রম ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে ডিভাইসের সফটওয়্যার রিফ্রেশ হয় এবং কোনো অ্যাপে যদি সমস্যা থাকে, সেটাও রিবুট বা পুনরায় চালু হয়।
কিছু প্রোগ্রাম ডিভাইসের চার্জ অনেক বেশি খরচ করে। অথচ রিস্টার্ট করলে সেসব প্রোগ্রামের এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আবার অ্যাপ্লিকেশনে কোনো বাগ বা ত্রুটি থাকলে সেটাও রিস্টার্ট করলে ঠিক হয়ে যেতে পারে।
৫. ডিভাইসের জন্য কাভার বা কেইস না কেনা এবং ডিভাইস সুরক্ষিত রাখার কোনো পরিকল্পনা না রাখা
হাত থেকে নতুন ডিভাইসটি ফসকে গিয়ে চোখের সামনে মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়লে কার ভাল লাগে? অনেকের কাছেই এমনটা ঘটলে মনে হয় সবকিছু স্লো মোশনে হচ্ছে। অথচ স্ক্রিনে আঘাত লেগে ভেঙে যাওয়া, ডিভাইসে পানি পড়া কিংবা ভুলবশত মাটিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা যখন-তখনই ঘটতে পারে। এ ধরনের ঘটনায় আপনার ডিভাইসকে সুরক্ষা দিতে পারে মজবুত একটা কেস।
আরো ভাল হয় যদি স্ক্রিন প্রটেক্টর বা ডিভাইসটি পানিরোধী হয়ে থাকে। মজবুত একটি স্ক্রিন প্রটেক্টর, কেস, কর্নার প্রটেক্টর, পপ সকেট বা স্মার্টফোন গ্রিপ আপনার ডিভাইস সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।