আপনি যদি মোবাইল ফটোগ্রাফি পছন্দ করেন, তাহলে নিশ্চই আপনি আপনার ছবিগুলোকে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলতে চান। কিন্তু প্রো-গ্রেডের ফটো এডিটিং সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা আপনার পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের জন্য তৈরি করা ফটো এডিটিং অ্যাপসমূহ আপনার ভালো সঙ্গী হতে পারে। এই অ্যাপসগুলোর সাহায্যে আপনি যেকোনো জায়গা থেকে, যেকোনো সময় আপনার ছবিগুলোতে ম্যাজিকের মতো পরিবর্তন আনতে পারবেন।
সেরা ১০ টি ফটো এডিটিং অ্যাপ
গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপ স্টোরে অসংখ্য ফটো এডিটিং অ্যাপ পাওয়া যায়। কিন্তু এতো অ্যাপের মধ্যে সেরাটা কোনটি, তা বেছে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। নির্বাচনের পূর্বে নিজের দক্ষতা এবং প্রয়োজন বিবেচনা করা জরুরী। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় ফটো এডিটিং অ্যাপ নিয়ে আলোচনা করা হল –
১. Snapseed (Android & iOS)
Snapseed গুগল দ্বারা উন্নত একটি শক্তিশালী এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব অ্যাপ। এটিতে ফটো এডিটিংয়ের সকল মৌলিক টুলসের পাশাপাশি রয়েছে অ্যাডভান্সড ফিচারও। নতুনদের জন্য Snapseed ব্যবহার করা সহজ, কারণ এতে প্রতিটি টুলের জন্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। Snapseed-এর সাহায্যে আপনি আপনার ছবিগুলোকে প্রোফেশনাল লুক দিতে পারবেন।
স্নাপসিডের ফিচার:
- স্ট্যান্ডার্ড এডিটিং টুলস (ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন)
- সিলেক্টিভ এডিটিং
- হিলিং ব্রাশ (Healing Brush)
- কার্ভ এডিটিং
- স্পট হিলিং
- টেক্সচার
- ডিটেল
- ফ্রেম
- লেন্স ব্লার
- ভিনেটিং
২. PicsArt (Android & iOS)
PicsArt একটি জনপ্রিয় অ্যাপ যা ফটো এডিটিংয়ের জন্য সকল মৌলিক টুলস সরবরাহ করে। PicsArt-এর সাহায্যে আপনি সহজেই স্টিকার, টেক্সট ওভারলে এবং ফটো কোলাজ তৈরি করতে পারবেন। এই অ্যাপটিতে নতুনদের জন্য টিউটোরিয়াল এবং অভিজ্ঞ এডিটরদের জন্য অ্যাডভান্সড টুলস রয়েছে।
পিক্সআর্টের ফিচার:
- স্ট্যান্ডার্ড এডিটিং টুলস (ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন)
- স্টিকার
- টেক্সট ওভারলে
- ফটো কোলাজ
- ফটো ফিল্টার
- ড্রয়িং টুলস
- ক্যামেরা ইফেক্ট
- ব্রাশ টুলস
- মাস্কিং টুলস
- ক্রপিং এবং রিসাইজিং টুলস
আরও দেখুন – ছবি ক্লিয়ার করার সফটওয়্যার – ঝাপসা ছবি ক্লিয়ার
৩. VSCO (Android & iOS)
VSCO ফটো ফিল্টারের জন্য বিখ্যাত একটি অ্যাপ। এতে রয়েছে হাজারো পেইড ও বিনামূল্যে ফিল্টার যা আপনার ছবিগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। VSCO-তে রয়েছে মৌলিক এবং অ্যাডভান্সড এডিটিং টুলস যা আপনাকে আপনার ছবিগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পাদনা করতে সাহায্য করবে। VSCO-এর একটি সক্রিয় কমিউনিটি রয়েছে যেখানে আপনি আপনার ছবিগুলো শেয়ার করতে এবং অন্যদের কাজ থেকে অনুপ্রেরণা পেতে পারেন।
ভিএসসিও ফিচার:
- হাজারো পেইড ও বিনামূল্যে ফিল্টার
- মৌলিক এডিটিং টুলস (ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন)
- সিলেক্টিভ এডিটিং
- কার্ভ এডিটিং
- গ্রাইন টুল
- ফেড টুল
- স্প্লিট টোন
- হোয়াইট ব্যালান্স
- ক্রপিং এবং রিসাইজিং টুলস
৪. Adobe Lightroom (Android & iOS)
Adobe Lightroom পেশাদার ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি জনপ্রিয় অ্যাপ। এতে রয়েছে ফটো এডিটিংয়ের জন্য সকল অ্যাডভান্সড টুলস। Lightroom-এর সাহায্যে আপনি আপনার ছবিগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পাদনা করতে পারবেন। Lightroom-এর একটি সক্রিয় কমিউনিটি রয়েছে যেখানে আপনি আপনার ছবিগুলো শেয়ার করতে এবং অন্যদের কাজ থেকে অনুপ্রেরণা পেতে পারেন।
লাইটরুমের ফিচার:
- রিলাইট প্রোফাইল (Lightroom profiles)
- কালার মিক্সিং
- কার্ভ এডিটিং
- ডিটেল এবং টেক্সচার
- হিলিং ব্রাশ (Healing Brush)
- ক্লোন স্ট্যাম্প
- নয়েজ রিডাকশন
- লেন্স কারেকশন (Lens correction)
- ক্রপিং এবং রিসাইজিং টুলস
৫. Pixlr (Android & iOS)
Pixlr PicsArt-এর বিকল্প একটি অ্যাপ। এতে রয়েছে PicsArt-এর মতো একই ধরনের ফিচার। Pixlr ব্যবহার করা সহজ এবং এটিতে নতুনদের জন্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। Pixlr-এর প্রিমিয়াম সংস্করণে আরো কিছু অ্যাডভান্সড ফিচার পাওয়া যায়।
পিক্সলার অ্যাপের ফিচার:
- স্ট্যান্ডার্ড এডিটিং টুলস (ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন)
- স্টিকার
- টেক্সট ওভারলে
- ফটো কোলাজ
- ফটো ফিল্টার
- ড্রয়িং টুলস
- ক্যামেরা ইফেক্ট
- ব্রাশ টুলস
- মাস্কিং টুলস
- ক্রপিং এবং রিসাইজিং টুলস
৬. Pixelmator (iOS)
Pixelmator iOS-এর জন্য একটি শক্তিশালী ফটো এডিটিং অ্যাপ। এতে রয়েছে প্রোফেশনাল এডিটরদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল টুলস। Pixelmator ব্যবহার করা সহজ, কারণ এতে প্রতিটি টুলের জন্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। এই অ্যাপের সাহায্যে আপনি আপনার ছবিগুলোকে প্রোফেশনাল লুক দিতে পারবেন।
পিক্সেলমাটর অ্যাপের ফিচার:
- শক্তিশালী এডিটিং টুলস
- স্ট্যান্ডার্ড এডিটিং টুলস (ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন)
- কালার করেকশন টুলস
- লেয়ারিং টুলস
- ব্রাশ টুলস
- মাস্কিং টুলস
- ফিল্টার এবং ইফেক্ট
- টেক্সচার টুলস
- নয়েজ রিডাকশন টুল
- ক্রপিং এবং রিসাইজিং টুলস
- পোট্রেট মোড
- ল্যান্ডস্কেপ এডিটিং টুলস
৭. Affinity Photo (iOS)
Affinity Photo iOS-এর জন্য একটি পেশাদার-গ্রেডের ফটো এডিটিং অ্যাপ। এতে রয়েছে প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফার এবং ডিজাইনারদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল টুলস। Affinity Photo ব্যবহার করা সহজ, কারণ এতে প্রতিটি টুলের জন্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। এই অ্যাপের সাহায্যে আপনি আপনার ছবিগুলোকে প্রোফেশনাল লুক দিতে পারবেন।
অ্যাফিনিটি অ্যাপের ফিচার:
- পেশাদার-গ্রেডের এডিটিং টুলস
- স্ট্যান্ডার্ড এডিটিং টুলস (ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন)
- কালার কারেকশন টুলস
- লেয়ারিং টুলস
- ব্রাশ টুলস
- মাস্কিং টুলস
- ফিল্টার এবং ইফেক্ট
- টেক্সচার টুলস
- নয়েজ রিডাকশন টুল
- ক্রপিং এবং রিসাইজিং টুলস
- HDR মার্জিং
- প্যানোরামা স্টিচিং
- ফ্রিকোয়েন্সি সেপারেশন
৮. Luminar AI (Android & iOS)
Luminar AI কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে ফটো এডিটিংকে সহজ করে তোলে। এতে রয়েছে AI চালিত এডিটিং টুলস যা আপনাকে আপনার ছবিগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উন্নত করতে সাহায্য করে। Luminar AI-তে রয়েছে সকল মৌলিক এবং অ্যাডভান্সড এডিটিং টুলস যা আপনাকে আপনার ছবিগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পাদনা করতে সাহায্য করবে। এই অ্যাপের সাহায্যে আপনি আপনার ছবিগুলোকে প্রোফেশনাল লুক দিতে পারবেন।
লুমিনার অ্যাপের ফিচার:
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চালিত এডিটিং টুলস
- স্ট্যান্ডার্ড এডিটিং টুলস (ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন)
- কালার কারেকশন টুলস
- ফটো ফিল্টার
- পোট্রেট মোড
- স্কাই রিপ্লেসমেন্ট
- অবজেক্ট রিমুভাল
- ল্যান্ডস্কেপ এডিটিং টুলস
- নয়েজ রিডাকশন টুল
- ক্রপিং এবং রিসাইজিং টুলস
৯. Photofox (Android & iOS)
Photofox একটি পূর্ণ-বৈশিষ্ট্যযুক্ত ফটো এডিটর যা Android এবং iOS উভয় প্ল্যাটফর্মেই পাওয়া যায়। এতে সকল মৌলিক এবং অ্যাডভান্সড এডিটিং টুলস রয়েছে যা আপনাকে আপনার ছবিগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পাদনা করতে সাহায্য করবে। Photofox-এর লেয়ার-ভিত্তিক এডিটিং ব্যবস্থা আপনাকে আপনার ছবিগুলোতে জটিল পরিবর্তন করার ক্ষমতা প্রদান করে। এই অ্যাপটিতে ডিজাইন টুলসও রয়েছে যা আপনাকে আপনার ছবিগুলোতে টেক্সট, শেপ এবং অন্যান্য গ্রাফিক্স যুক্ত করতে সাহায্য করবে।
ফটোফক্স অ্যাপের ফিচার:
- পূর্ণ-বৈশিষ্ট্যযুক্ত ফটো এডিটর
- স্ট্যান্ডার্ড এডিটিং টুলস (ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন)
- কালার কারেকশন টুলস
- লেয়ার-ভিত্তিক এডিটিং
- ফটো ফিল্টার
- ব্রাশ টুলস
- মাস্কিং টুলস
- টেক্সচার টুলস
- নয়েজ রিডাকশন টুল
- ক্রপিং এবং রিসাইজিং টুলস
- ডিজাইন টুলস (টেক্সট, শেপ ইত্যাদি)
১০. Canva (Web, Android & iOS)
Canva একটি জনপ্রিয় অ্যাপ যা ফটো এডিটিং এবং ডিজাইন টুলসের সমন্বয় প্রদান করে। এতে সকল মৌলিক এডিটিং টুলস এবং ফটো ফিল্টার রয়েছে যা আপনাকে আপনার ছবিগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে সাহায্য করবে। Canva-তে রয়েছে প্রচুর টেমপ্লেট, টেক্সট টুলস এবং গ্রাফিক্স যা আপনাকে সহজেই পোস্টার, কার্ড, এবং অন্যান্য ডিজাইন তৈরি করতে সাহায্য করবে। এই অ্যাপটি ব্যবহার করা সহজ, তাই এটি নতুনদের জন্য আদর্শ।
ক্যানভা অ্যাপের ফিচার:
- ফটো এডিটিং এবং ডিজাইন টুলসের সমন্বয়
- স্ট্যান্ডার্ড এডিটিং টুলস (ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন)
- ফটো ফিল্টার
- টেক্সট টুলস
- টেমপ্লেট
- গ্রাফিক্স
- ফটো কোলাজ
- লোগো তৈরির সুবিধা
ভালো ফটো এডিটিং অ্যাপটি বেছে নিতে টিপস
একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করে দেখুন এবং আপনার জন্য কোনটি সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর তা বের করুন। YouTube-এ টিউটোরিয়াল দেখে অ্যাপগুলোর ফিচার সম্পর্কে জানুন। নতুন ফিচার এবং টুলস সম্পর্কে আপডেট থাকার জন্য অ্যাপগুলোর ব্লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজগুলো ফলো করুন।
- আপনি কি একজন নতুন ফটো এডিটর? নতুনদের জন্য সহজে বোঝা যায় এমন ইন্টারফেস এবং মৌলিক এডিটিং টুলস থাকা অ্যাপ ভালো।
- আপনি কি আরো এডভান্স ফিচার খুঁজছেন? অ্যাডভান্সড এডিটিং, যেমন কার্ভ এডিটিং, সিলেক্টিভ এডিটিং ইত্যাদি করতে চাইলে, আরো জটিল ফিচার থাকা অ্যাপ বেছে নিন।
- বিনামূল্যে অ্যাপ না প্রিমিয়াম অ্যাপ? বেশিরভাগ অ্যাপেরই বিনামূল্যে সংস্করণ থাকে, তবে কিছু ফিচার বা টুলস ব্যবহারের জন্য প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন লাগতে পারে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বিনামূল্যে বা প্রিমিয়াম অ্যাপটি বেছে নিন।
পরিশেষে:
আপনার স্মার্টফোনের ছবিগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইলে এই ফটো এডিটিং অ্যাপগুলো আপনার ভালো সঙ্গী হতে পারে। আপনি নতুন ফটো এডিটর হোন বা অভিজ্ঞ, এই তালিকায় আপনার জন্য উপযুক্ত অ্যাপটি রয়েছে। বিনামূল্যে এবং প্রিমিয়াম, সহজ এবং জটিল – বিভিন্ন ধরণের ফিচারের মধ্যে বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার ছবিগুলোর রং, আলোকসজ্জা, এবং বিস্তারিত সম্পাদনা করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি ফটো ফিল্টার, স্টিকার, টেক্সট ওভারলে এবং আরও অনেক কিছু যোগ করে আপনার ছবিগুলোকে আরো সৃষ্টিধর্মী করে তুলতে পারবেন।