বিশ্বের বৃহত্তম ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট চেইন এর নাম ম্যাকডোনাল্ড’স। বিশ্বজুড়ে এই ব্র্যান্ডের ৪০ হাজারেরও বেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে ম্যাকডোনাল্ড’স এর মোট রেস্টুরেন্টের এক তৃতীয়াংশই যুক্তরাষ্ট্রে।
আমেরিকার প্রতিটা নাগরিকের বাসস্থানের অন্তত ১১৫ মাইলের মধ্যে এক বা একাধিক ম্যাকডোনাল্ড’স রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
অবশ্য নাগরিকদের মধ্যে যারা জনবিরল অঞ্চলে থাকেন, তাদের বাসা থেকে কোনো ম্যাকডোনাল্ড’স এর সর্বোচ্চ দূরত্বের হিসাব এটি। তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন ৩৮ লক্ষ বর্গমাইল। এবং দেশটির জনবহুল প্রতিটি শহর বা উপশহরে সাধারণত নাগরিকদের হাঁটার দূরত্বেই পাওয়া যায় ম্যাকডোনাল্ড’স।
তবে শুধু ক্রেতা না, বরং ম্যাকডোনাল্ড’স এর কর্মী হিসেবেও এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন প্রচুর আমেরিকান।
যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বর্তমানে ৩৩ কোটির কিছু বেশি। এবং আমেরিকার নাগরিকদের মধ্যে প্রতি ৮ জনে ১ জন তার জীবনের কোনো না কোনো সময়ে ম্যাকডোনাল্ড’স-এ চাকরি করেছেন।
চাকরিতে লোক নিয়োগের ভিত্তিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনাল্ড’স। প্রথম অবস্থানে রয়েছে আরেক আমেরিকান রিটেইল চেইন প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট। ১১৯টিরও বেশি দেশে বর্তমানে ম্যাকডোনাল্ড’স এর রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এবং প্রতিদিন এসব রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার অর্ডার করছেন প্রায় ৭ কোটি মানুষ।
‘ম্যাকডোনাল্ড’স’ নামের এই ৮০ বছর পুরনো ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট এর ইতিহাসও বেশ ঘটনাবহুল। আমেরিকার অর্থনীতি থেকে শুরু করে ক্রেতাদের পছন্দ ও চাহিদার মত নানান বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বার বার পাল্টানো হয়েছে ‘ম্যাকডোনাল্ড’স’ এর ব্যবসার ধরন ও পদ্ধতি। প্রতিষ্ঠানটি জনপ্রিয় করে তোলার পেছনেও রয়েছে একাধিক মানুষের অবদান।
আরও পড়ুনঃ ফুড ডেলিভারি ব্যবসা – অল্প পুঁজিতেই বেশি লাভ!
শুরুর আগে ম্যাকডোনাল্ড’স
ম্যাকডোনাল্ড’স নামটা এসেছে এর প্রতিষ্ঠাতা দুই ভাইয়ের নাম থেকে। বড় ভাই মরিস ম্যাকডোনাল্ড এবং ছোট ভাই রিচার্ড ম্যাকডোনাল্ড এর জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যে। তাদের বাবা-মা’র জন্ম ছিল আয়ারল্যান্ডে। তবে অল্প বয়সেই তারা আমেরিকায় পাড়ি জমান।
আয়ারল্যান্ডের দরিদ্র অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেয়া এই দুই ভাইয়ের ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল মিলিয়নেয়ার হওয়ার। তবে এই স্বপ্ন পূরণে তাদেরকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক চড়াই-উৎরাই।
মরিস ও রিচার্ড ম্যাকডোনাল্ডের বাবা কাজ করতেন একটি জুতার কারখানায়। একই কারখানায় ৪২ বছর কাজ করার পর একদিন তার বাবাকে ছাঁটাই করা হয় কোনো ধরনের পেনশন বা ভাতা ছাড়াই। এই ঘটনার পর তরুণ দুই ম্যাকডোনাল্ড ভাই উপলব্ধি করেন নিউ হ্যাম্পশায়ারে তাদের ভাগ্য খুলবে না।
ম্যাকডোনাল্ড পরিবারের এক আত্মীয় থাকতেন ক্যালিফোর্নিয়ার হলিউড অঞ্চলে। সেই আত্মীয় ম্যাকডোনাল্ড ভাইদেরকে হলিউডে চাকরি জুটিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন। ফলে একে একে দুই ভাই নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে পাড়ি জমান হলিউডে। উল্লেখ্য, আমেরিকার এক প্রান্তে অবস্থিত নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে আরেক প্রান্তের ক্যালিফোর্নিয়ার দূরত্ব ৩ হাজার মাইলেরও বেশি।
হলিউডে আসার পর বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘কলম্বিয়া পিকচার্স’-এ বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো কাজ করা শুরু করেন তারা। ট্রাক চালানো থেকে শুরু করে সিনেমার শ্যুটিং লোকেশন পাল্টানোর সময় জিনিসপত্র সরানোর কাজ করতেন ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা।
সে সময় নির্বাক চলচ্চিত্রের জয়জয়কার। ফলে এই দুই ভাই তাদের কিছু টাকা জমিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ২০ মাইল দূরে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত সিনেমা হল ভাড়া নেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে আমেরিকা, যা ইতিহাসে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ নামে পরিচিত। গ্রেট ডিপ্রেশন চলাকালীন সময় ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের সিনেমা হলের ব্যবসাতেও মন্দা নেমে আসে।
একদিন দুই ভাই লক্ষ্য করেন, তাদের সিনেমা হলের বাইরেই এক লোক ফেরি করে হট ডগ আর বিয়ার বিক্রি করছে। এবং সিনেমা হলে যত মানুষ টিকিট কেনে, তার তুলনায় অনেক বেশি মানুষ হট ডগ বিক্রেতার কাছ থেকে খাবার কিনছে।
এখান থেকেই নতুন ব্যবসার ধারণা আসে তাদের মাথায় এবং সিনেমা হলের ব্যবসা ছেড়ে এই দুই ভাই রেস্টুরেন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নেন। তবে প্রথমে তারা যেই খাবারের দোকান খোলেন, সেটা কোনো দালান ছিল না। বরং সেটাকে ‘ফুড স্টল’ বা ‘ফুড স্ট্যান্ড’ বলা যেতে পারে।
তাদের প্রতিষ্ঠিত প্রথম সেই ফুড স্টলের নাম ছিল ‘এয়ারডোম’। এয়ারডোম-এ শুধু হট ডগ, হ্যামবার্গার আর কমলার জুস পাওয়া যেত।
১৯৩৭ সালে এয়ারডোম প্রতিষ্ঠা করার পর তারা নিজেদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আরো বড় করে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। এই উদ্দেশ্যে ‘সান বার্নাডিনো’ নামের একটি শহরে নিজেদের স্থায়ী রেস্তোরাঁ খোলেন ১৯৪০ সালে। নাম দেয়া হয় ‘ম্যাকডোনাল্ড’স বারবিকিউ’ এবং রেস্তোরাঁর মেন্যুতে যোগ করা হয় মোট ২৫টি খাবারের আইটেম, যার মধ্যে হ্যামবার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং আইসক্রিম ছিল বিখ্যাত।
সান বার্নাডিনো শহরে বেশ বিখ্যাত হয় ‘ম্যাকডোনাল্ড’স বারবিকিউ’। এবং ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা তাদের রেস্তোরাঁ থেকে বছরে ৪০ হাজার ডলার আয় করতে থাকেন, বর্তমান সময়ে যার মূল্যমান ৭ লক্ষ ডলার।
ম্যাকডোনাল্ড’সের ব্যবসার সম্প্রসারণ এবং আধুনিকায়ন
ম্যাকডোনাল্ড’স এর রেস্তোরাঁ বেশ ভালই চলছিল। তারা নিজেদের কার্যক্রম ‘ড্রাইভ ইন’ পদ্ধতিতে পরিচালনা করছিলেন। অর্থাৎ, গ্রাহকরা গাড়ি চালিয়ে তাদের রেস্তোরাঁয় এসে গাড়িতে বসেই ওয়েটারদের কাছ থেকে নিজেদের খাবার সংগ্রহ করতে পারত।
তবে কয়েক বছর এভাবে ব্যবসা করার পর ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা নিজেদের ব্যবসা আরো বড় করে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। তারা লক্ষ্য করেন, তাদের ক্রেতাদের একটা বড় অংশ কর্মজীবী মানুষ। আর এসব মানুষের চাহিদা থাকে লাঞ্চ বা দুপুরের খাবারের বিরতির সময় দ্রুত খাবার অর্ডার করা এবং সেই খাবার খেয়ে কাজে ফেরা।
মূলত কর্মজীবীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে তারা নিজেদের দোকান নতুন করে সাজিয়ে তোলেন।
দোকানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ম্যাকডোনাল্ড’স হ্যামবার্গারস’। মূলত প্রতিষ্ঠাতারা লক্ষ্য করেছিলেন তাদের মেন্যুর ২৫টি খাবারের মধ্যে হ্যামবার্গারই সবচেয়ে জনপ্রিয়। ফলে এই হ্যামবার্গারকে কেন্দ্র করেই তারা রেস্তোরাঁর মেন্যু ৬টি খাবারের আইটেমে নামিয়ে আনেন, যার মধ্যে খাবার হিসেবে হ্যামবার্গার ছাড়াও ছিল চিজ বার্গার, অ্যাপল পাই এবং পটেটো চিপস। পানীয় হিসেবে বিক্রি করা হত সফট ড্রিংকস, কফি এবং রুট বিয়ার।
দুয়েক বছরের মধ্যে পটেটো চিপস এবং অ্যাপল পাই এর জায়গা দখল করে নেয় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং মিল্কশেক।
আর এই মিল্কশেক বিক্রির সিদ্ধান্তই ১৯৫৪ সালে ম্যাকডোনাল্ড’স এর ইতিহাস বদলে দেয়। ঠিক কীভাবে সেটা ঘটে, জানা যাবে লেখার পরবর্তী অংশে।
যাহোক, ১৯৪৭ সালে ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা নিজেদের রেস্টুরেন্ট আধুনিকায়নের এই উদ্যোগ হাতে নেন। এছাড়াও দ্রুত খাবার সরবরাহের জন্যে তারা ওয়েটারদের বদলে ‘সেলফ-সার্ভিস’ বা ক্রেতাদের কাউন্টারে এসে খাবার সংগ্রহের ব্যবস্থা চালু করেন। এবং কাউন্টারে এসে যেন কাউকে অপেক্ষা করা না লাগে, সেজন্য দ্রুততম সময়ে খাবার তৈরির পদ্ধতি চালু করেন।
আমেরিকান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড এর গাড়ি তৈরির কারখানা কীভাবে মেশিন এর মত স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়, সে বিষয়ে তাদের ধারণা ছিল। গাড়ি তৈরির প্রতিটা ধাপে নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য একজন কর্মী নিযুক্ত থাকত।
এবং দুই ভাই লক্ষ্য করেন, একই ভাবে যদি তারা নিজেদের রেস্টুরেন্ট-এ খাবার তৈরি করতে পারেন, তাহলে খুবই কম সময়ে ক্রেতাদের অর্ডার অনুসারে খাবার ডেলিভারি দিতে পারবেন তারা। ফলে কারখানার মত একাধিক মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় খাবার তৈরির পদ্ধতি চালু করেন ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা। গাড়ি তৈরির কারখানায় ‘অ্যাসেম্বলি লাইন’-এ যেভাবে প্রতিজন মানুষের জন্য আলাদা কাজ নির্ধারিত থাকত, তেমনি ম্যাকডোনাল্ড’স এর রেস্টুরেন্টে বার্গার তৈরির জন্য প্রতিজন কর্মীর আলাদা কাজ নির্ধারণ করা থাকত।
এসব পদ্ধতি কাজে লাগানোর ফলে শহরের অন্যান্য রেস্তোরাঁর তুলনায় অর্ধেক দামে বার্গার বিক্রি করতে সফল হয় প্রতিষ্ঠানটি। একই সময়ে ম্যাকডোনাল্ড’স তাদের প্রথম ‘ম্যাসকট’ নিয়ে আসে। ‘স্পিডি’ নামের সেই ম্যাসকট এর মাথা ছিল বার্গারের মত দেখতে এবং মাথায় থাকত বাবুর্চিদের টুপি ‘শেফস হ্যাট’। দোকানের সামনে বড় করে স্পিডি’র ছবিও প্রদর্শন করা শুরু হয়।
পরবর্তীতে, ১৯৬৫ সালে ম্যাকডোনাল্ড’স এর ম্যাসকট পরিবর্তন করা হয়। ‘রোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড’ নামের একটি ক্লাউন বা ভাঁড়কে নিজেদের ম্যাসকট চরিত্র হিসেবে নির্ধারণ করে কোম্পানিটি। মূলত শিশুদেরকে ম্যাকডোনাল্ড’স এর খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তুলতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়।
যাহোক, ১৯৪৭ সালে প্রথম ম্যাসকট এর নাম অনুসারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্ডার করা খাবার সরবরাহের ব্যবস্থার নাম দেয়া হয় ‘স্পিডি সার্ভিস সিস্টেম’। আধুনিক ‘ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট’ এর ধারণা তখনও জনপ্রিয় হয়নি। এবং ম্যাকডোনাল্ড’স সহ আরো কিছু ব্র্যান্ডের দ্রুত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা পরবর্তীতে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে এবং ‘ফাস্ট ফুড’ এর ধারণা বিকশিত হয়।
আধুনিক ম্যাকডোনাল্ড’স এর প্রতীক ‘গোল্ডেন আর্চেস’ এর সূচনা
যেকোনো ম্যাকডোনাল্ড’স-এ গেলে সোনালী বা হলুদ রঙের ইংরেজি ‘এম’ অক্ষর দেখেই সেটা চেনা যায়। এই প্রতীকের নাম ‘গোল্ডেন আর্চেস’। তবে ম্যাকডোনাল্ড’স এর এই চিরচেনা প্রতীকের শুরুটা ছিল একটি রেস্তোরাঁ নির্মাণের সময় স্থাপত্যশৈলী বা ডিজাইন হিসেবে।
১৯৪৭ সালে ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের ব্যবসা আধুনিকায়নের উদ্যোগ বেশ সফলতা পায়। এবং মুখে মুখেই ম্যাকডোনাল্ড’স এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৪৯ সালে ম্যাকডোনাল্ড’স থেকে প্রতি বছর ১ লক্ষ ডলার আয় করা শুরু করেন ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা। আজকের দিনের তুলনায় এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ লক্ষ ডলার। তবে এ পরিমাণ অর্থ তারা নিজেদের একটি আউটলেট বা রেস্তোরাঁর কার্যক্রম থেকেই আয় করছিলেন।
১৯৫২ সালে ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা নতুন আরেকটি আউটলেট খোলার কথা ভাবেন দুটি উদ্দেশ্যে। প্রথমত রেস্তোরাঁর কার্যক্রম আরো এফিশিয়েন্ট করা এবং দ্বিতীয়ত দেখতে চমৎকার কোনো স্থাপনা নির্মাণের উদ্দেশ্য দুটি পূরণের জন্য তারা স্থাপত্যবিদ খোঁজা শুরু করেন।
এক পর্যায়ে ‘স্ট্যানলি ক্লার্ক মেসটন’ নামের একজন স্থাপত্যবিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন তারা। এবং স্ট্যানলি যখন ম্যাকডোনাল্ড’স এর নতুন এই শাখা নির্মাণের কাজ শেষ করেন, তখন সেই স্থাপনায় চোখে পড়ার মত যেই বৈশিষ্ট্য ছিল, সেটিই ‘গোল্ডেন আর্চেস’।
ম্যাকডোনাল্ড’স এর লোগো, প্রতীক বা অন্য কোনো কিছুই সে সময় নির্ধারিত হয়নি। তবে বর্তমান সময়ের যে কেউ অতীতে গিয়ে ম্যাকডোনাল্ড’স এর নতুন শাখাটি দেখলে মুহূর্তের মধ্যেই একে ম্যাকডোনাল্ড’স হিসেবে চিনতে পারবে। কারণ সেখানে লোহার তৈরি হলুদ রঙের ২৫ ফুট উঁচু দুটি খিলান বা তোরণ ছিল, যার আকৃতি দেখলে আধুনিক ম্যাকডোনাল্ড’স এর প্রতীকের কথাই মনে পড়বে।
ইংরেজি ‘আর্চ’ (arch) শব্দটির অর্থ খিলান বা তোরণ। আর সোনালি তোরণ বা ‘গোল্ডেন আর্চেস’ নামটি ম্যাকডোনাল্ড’স এর দ্বিতীয় শাখা নির্মাণের সময়ই তৈরি। এবং সেটিই পরবর্তীতে বহুল পরিচিত ম্যাকডোনাল্ড’স এর প্রতীকে পরিণত হয়।
ম্যাকডোনাল্ড’স ফ্র্যাঞ্চাইজির শুরু
সহজ কথায়, ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থা হল অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু শর্তে একটি ব্র্যান্ডের নাম, লোগো ও ব্যবসা পদ্ধতি অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করতে দেয়া।
দ্বিতীয় রেস্টুরেন্ট খোলার পর ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থায় অর্থের বিনিময়ে ম্যাকডোনাল্ড’স নামে অন্যদের ব্যবসা করার সুযোগ দেয়ার চিন্তা করেন। ১৯৫৩ সালে অ্যারিজোনা রাজ্যে ম্যাকডোনাল্ড’স এর প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি শাখা খোলা হয়।
একই বছর আরেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি শাখা খোলা হয় ক্যালিফোর্নিয়ার ডাউনি শহরে। এবং শুরুতে দেখতে যেমন ছিল, ম্যাকডোনাল্ড’স এর এই শাখাটি এখনও ঠিক তেমনই রাখা হয়েছে (কভারের ছবি)।
১৯৫৩ সালেই ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা বিল ট্যানসি নামের একজন ফ্র্যাঞ্চাইজি এজেন্ট এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। বিল ট্যানসির উদ্যোগে ম্যাকডোনাল্ড’স এর ২১টি ফ্র্যাঞ্চাইজি শাখা খোলা হয়। এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে আসা অর্থের বিনিময়ে ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের মালিকানায় ৯টি নতুন রেস্তোরাঁ খোলা হয়।
তবে ম্যাকডোনাল্ড’স এর সঙ্গে কাজ শুরু করার বছরখানেকের মধ্যেই বিল অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কাজে ইস্তফা দেন। তবে ১৯৫৪ সালের মধ্যে রে ক্রক নামের আরেকজন লোক দেশজুড়ে ম্যাকডোনাল্ড’স এর ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলার সম্ভাবনা দেখতে পান। এবং তার হাত ধরেই বদলে যায় ম্যাকডোনাল্ড’স এর ব্যবসার ধরন।
রে ক্রক এর নেতৃত্বে ম্যাকডোনাল্ড’স এর অগ্রযাত্রা
১৯০২ সালে ইলিনয় রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন রেমন্ড অ্যালবার্ট ক্রক, যিনি ‘রে ক্রক’ নামেই অধিক পরিচিত। পেশাজীবনে পিয়ানো বাদক, সেলসম্যান কিংবা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা ছাড়াও রেডিওতে কাজ করেছেন তিনি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়ও রে ক্রক প্রাপ্তবয়স্ক হননি। তবুও তার যুদ্ধে যাওয়ার শখ ছিল। ফলে নিজের বয়সের ব্যাপারে মিথ্যা বলে রেড ক্রস-এ যোগ দেন। এবং রেড ক্রস এর অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য কানেটিকাট রাজ্যের একটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
মজার ব্যাপার হল, একই ক্যাম্পে আরেকজন মানুষও এসেছিলেন যুদ্ধে যোগ দেয়ার তাড়নায়। এবং তিনিও রে ক্রক এর মত অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। ওয়াল্ট ডিজনি নামের সেই মানুষটি পরবর্তীতে আমেরিকা সহ বিশ্বজুড়ে অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করার জন্য খ্যাতি লাভ করেন।
যাহোক, রে ক্রক এবং ওয়াল্ট ডিজনির প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। ফলে তাদেরকে আর যুদ্ধে যোগ দিতে হয়নি। অবশ্য ক্যাম্পে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নিলেও পরবর্তী জীবনে এই দুজনের মধ্যে যোগাযোগ ছিল না। যাহোক, পেশাজীবনে একটা সময়ে মিল্কশেক তৈরির মেশিন বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন রে ক্রক। তার মেশিন দিয়ে একইসঙ্গে ৫ গ্লাস মিল্কশেক বানানো যেত। এবং মেশিনটির নাম ছিল ‘মাল্টি মিক্সার’।
১৯৫৪ সালে একদিন তিনি লক্ষ্য করেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত ম্যাকডোনাল্ড’স নামের একটি রেস্তোরাঁই তার কাছ থেকে ৮টি ‘মাল্টি মিক্সার’ মেশিন অর্ডার করেছে। একটি রেস্তোরাঁর একটি শাখার জন্য এতগুলি মেশিন এর আগে কখনো কেউ অর্ডার করেনি। ফলে তিনি বেশ অবাক হন এবং নিজে গিয়ে ম্যাকডোনাল্ড’স এর ব্যবসার ধরন ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।
রেস্টুরেন্টটির দ্রুত সময়ে খাবার পরিবেশন এবং জনপ্রিয়তা দেখে রে ক্রক বেশ অবাক হয়ে যান এবং সেদিনই ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের সঙ্গে আমেরিকা জুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি শাখা খোলার ব্যাপারে আলাপ করেন। তবে রে ক্রক এর মত এত বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের। ফলে দেশব্যাপী ব্যবসা সম্প্রসারণের ব্যাপারে রে ক্রক যেই প্রস্তাব এনেছিল, সেটা নাকচ করে দেন তারা।
তবে রে ক্রক নাছোড়বান্দার মতই পরবর্তীতে ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যান। এবং তাদেরকে আশ্বস্ত করেন যে, দেশজুড়ে ম্যাকডোনাল্ড’স এর ফ্র্যাঞ্চাইজি শাখা খোলার সকল ঝুঁকি তিনি নিজে নেবেন। বিনিময়ে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি শাখা থেকে আসা লভ্যাংশের ০.৫ শতাংশ পাবে ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা।
দায়িত্ব নেয়ার পর রে ক্রক ম্যাকডোনাল্ড’স-এ বড় ধরনের বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন। প্রথমত, ফ্র্যাঞ্চাইজি শাখা যেই স্থানে খোলা হবে, সেখানকার জমি কিনে নিয়ে সেটাই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ভাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এটি ছিল ম্যাকডোনাল্ড’স এর ইতিহাসে সবচেয়ে লাভজনক সিদ্ধান্ত। কেননা, এখনও পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ম্যাকডোনাল্ড’স এর যত সম্পত্তি আছে, তার ৯৯ শতাংশই হল রিয়েল এস্টেট বা জমি। এবং এ পরিমাণ জমি ম্যাকডোনাল্ড’স এর মালিকানায় আসা শুরু হয় রে ক্রক এর সিদ্ধান্তের ফলেই।
ফলে ম্যাকডোনাল্ড’স-কে একইসঙ্গে একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ম্যাকডোনাল্ড’স এর সকল রেস্তোরাঁর মধ্যে ৭০ শতাংশ রেস্টুরেন্ট বিল্ডিং এবং ৪৫ শতাংশ জমির মালিক কোম্পানি নিজে। এসব রিয়েল এস্টেট মূলত ফ্র্যাঞ্চাইজিদের লিজ দেয়া অবস্থায় রয়েছে।
এছাড়াও রে ক্রক এর সিদ্ধান্ত অনুসারে দেশজুড়ে প্রতিটি ম্যাকডোনাল্ড’স এর খাবারের মান ও দোকানের ধরন একই রকম রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৬০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগের জন্য হাইওয়ে নির্মাণ করে। এবং নতুন নির্মিত এসব হাইওয়ে’র ফলে দেশজুড়ে ম্যাকডোনাল্ড’স এর শাখার সংখ্যা বাড়তে থাকে।
তবে তখনও পর্যন্ত রে ক্রককে যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের অনুমতি নিতে হত। ফলে তিনি ১৯৬১ সালে সম্পূর্ণ ব্যবসা নিজের মালিকানায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং বিষয়টা নিয়ে ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের সঙ্গে আলাপ করেন।
আলাপ আলোচনায় নির্ধারিত হয়, ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা ২.৭ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে তাদের ব্যবসার সকল স্বত্ব বিক্রি করে দেবেন রে ক্রক এর কাছে। ১৯৬১ সালের ২.৭ মিলিয়ন ডলার আজকের দিনে ২৩ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। রে ক্রক খুব দ্রুতই প্রতিষ্ঠানটিকে আমেরিকার সর্ববৃহৎ ফাস্টফুড বিক্রেতা হিসেবে গড়ে তোলেন। শেয়ার বাজারে পাবলিক কোম্পানি হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করে ম্যাকডোনাল্ড’স।
দীর্ঘ ৬ দশকে ম্যাকডোনাল্ড’স এর সমৃদ্ধি
১৯৬১ সালে রে ক্রক ম্যাকডোনাল্ড’স এর দায়িত্ব গ্রহণের পর কেটে গেছে ৬ দশকেরও বেশি সময়। দীর্ঘ এই সময়ে বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি, এসেছে অনেক সাফল্যও। ১৯৬৭ সালে আমেরিকার বাইরে প্রথম ম্যাকডোনাল্ড’স এর শাখা খোলা হয় কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যে।
এদিকে ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকায় মার্টিন লুথার কিং এবং অন্যান্যদের নেতৃত্বে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তার নাম ছিল ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’। এই আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৮ সালে প্রথম কালো চামড়ার আফ্রিকান আমেরিকান একজন লোক ম্যাকডোনাল্ড’স এর একটি শাখার ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে নেদারল্যান্ডসে, ১৯৭৪ সালে নিউজিল্যান্ডে, ১৯৮৩ সালে মেক্সিকোতে এবং ১৯৯০ সালে চীনে ম্যাকডোনাল্ড’স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অনেক মহাদেশে এই ব্র্যান্ডের উপস্থিতি তৈরি হয়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ম্যাকডোনাল্ড’স এর বেশ কিছু রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ঘটেছে। যেমন, ১৯৮৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ম্যাকডোনাল্ড’স-এ হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা, যাতে ২১ জন মারা যান। ১৯৯২ সালে কানাডার একটি ম্যাকডোনাল্ড’স-এও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
২০১৬ সালে জার্মানির মিউনিখে একটি ম্যাকডোনাল্ড’স-এ হামলা চালায় এক সন্ত্রাসী। তাতে ৯ জন অভিবাসী মারা যান। জার্মানিতেই ১৯৮৭ সালে আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বিমান ম্যাকডোনাল্ড’স এর রেস্তোরাঁর ওপর আছড়ে পড়ে। এতে ৯ জন মারা যান।
এদিকে ইংল্যান্ডের প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ-এর মালিকানাতে বাকিংহাম প্যালেসের কাছে স্থাপিত হয়েছিল একটি ম্যাকডোনাল্ড’স। শোনা যায়, রানী নিজেও ম্যাকডোনাল্ড’স এর খাবার পছন্দ করতেন।
বেশ কিছু অদ্ভুত আর চমৎকার স্থানেও ম্যাকডোনাল্ড’স এর দোকান রয়েছে। যেমন নিউজিল্যান্ডে একটি পরিত্যক্ত বিমানের মধ্যে ম্যাকডোনাল্ড’স এর একটি শাখা রয়েছে। আর ১৯ হাজার স্কয়ারফিটের সর্ববৃহৎ ম্যাকডোনাল্ড’স রয়েছে আমেরিকার ফ্লোরিডায়। মালয়েশিয়ায় উপনিবেশিক আমলের একটি প্রাসাদে রয়েছে ম্যাকডোনাল্ড’স এর একটি শাখা।
এদিকে বিশ্বজুড়ে ম্যাকডোনাল্ড’স এর খাবারের মধ্যে বিগ ম্যাক, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, হ্যামবার্গার বা হ্যাপি মিল বেশ জনপ্রিয়। তবে বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনায় আঞ্চলিক কিছু রেসিপিও সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
যেমন এশিয়ার বেশ কিছু দেশের ম্যাকডোনাল্ড’স-এ স্যুপ বিক্রি করা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় ‘ম্যাকরাইস’ নামের একটি ফ্রায়েড রাইস আইটেম জনপ্রিয়। এবং জাপান ও সিঙ্গাপুর জুড়ে জনপ্রিয় একটি ম্যাকডোনাল্ড’স এর খাবার হল চিংড়ির বার্গার, যাকে ‘এবি বার্গার’ বলা হয়।
প্রযুক্তির ব্যবহার ও ম্যাকডোনাল্ড’স এর ভবিষ্যৎ
বর্তমানে ব্র্যান্ড ভ্যালুর হিসাবে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ব্র্যান্ডের নাম ম্যাকডোনাল্ড’স। এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে এই ব্র্যান্ড এর। যেমন, ম্যাকডোনাল্ড’স এর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্যে রয়েছে বিশেষ প্রতিষ্ঠান। ‘হ্যামবার্গার ইউনিভার্সিটি’ নামের এই প্রতিষ্ঠান শিকাগোতে অবস্থিত।
প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে ম্যাকডোনাল্ড’স-এ কাজ করার অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেন ৫ হাজার মানুষ।
বিশ্বজুড়ে ম্যাকডোনাল্ড’স এর নেতৃত্বস্থানীয় কর্মকর্তাদের ৪০ শতাংশই এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ফলে ম্যাকডোনাল্ড’স এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ এক দায়িত্ব পালন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও বেশ কয়েক দশক ধরেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে ম্যাকডোনাল্ড’স।
১৯৯০ এর দশকেই ম্যাকডোনাল্ড’স এর কিছু শাখায় খাবারের অর্ডার দেয়া এবং বিল পরিশোধের জন্য বিশেষ মেশিন স্থাপন করা হয়। ২০১৭ সালে অনলাইনে খাবার অর্ডার করার পর দোকান থেকে তাৎক্ষণিক খাবার সংগ্রহের সিস্টেম চালু করে কোম্পানিটি।
২০১৯ সালে এআই নিয়ে কাজ করা একটি স্টার্টআপ কিনে নেয় ম্যাকডোনাল্ড’স। এর মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রমে আরো বড় পরিসরে এআই প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করতে সমর্থ হয় তারা। সর্বশেষ ২০২৩ সালের শুরুতে টেক্সাসে উদ্বোধন হয় ম্যাকডোনাল্ড’স এর প্রথম সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় রেস্তোরাঁ।